সাবিত্রীর পতিব্রতা কথা – উপাখ্যান

গল্প Blog উপখ্যান জীবনী ভারত সচেতনতা সাহিত্য

হিন্দু ধর্মে সতীত্বকে নারীত্বের চির উজ্জ্বল আর্দশ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই সতী-সাধ্বী পতিব্রতা রমণীগণ এ সমাজে যুগ যুগ ধরে নন্দিত হয়ে আসছেন। আর্দশ পতিব্রতা রমণী একজনমাত্র পুরুষভিন্ন দ্বিতীয় কোন পুরুষকে স্বামীরূপে কল্পনাও করেন না । সুখে-দুঃখে, সম্পদে-বিপদে পতির অনুগত থেকে পতিসেবায় নিবেদিত প্রাণা হয়ে থাকেন প্রতিব্রতা রমণী। এভাবে যে সব পতিব্রতা রমণী অশেষ দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেও পতি ও তার পরিবারের কল্যাণ সাধন করে প্রাতঃস্মরণীয়া হয়ে রয়েছেন, সে সব মহীয়সী নারীদের মধ্যে সাবিত্রী অন্যতম।

পুরাকালে মদ্রদেশে অশ্বপতি নামে এক রাজা ছিলেন। ধার্মিক, দাতা, সত্যনিষ্ঠ বলে তাঁর প্রচুর খ্যাতি ছিল। বিবাহিত জীবনে অনেক দিন সন্তান না হওয়ায় রাজা সন্তান লাভের আশায় কঠোর তপস্যা করতে লাগলেন। আঠারো বছর সাধনার পর তিনি আরাধ্য দেবী সাবিত্রীর দেখা পেলেন। দেবী রাজাকে এক তেজস্বীনি, রূপবতী ও গুণবতী কন্যা লাভের বর দিয়ে অন্তর্হিত হলেন। কিছুদিন পর রাজার ঘর আলো করে, রাণীর কোলে চাঁদের মত সুন্দর ফুটফুটে এক কন্যা এলো। সাবিত্রী দেবীর অনুগ্রহে কন্যা লাভ করেছেন বলে অশ্বপতি তাঁর নাম রাখলেন সাবিত্রী। একদিন সাবিত্রী স্নানের পর দেবপূজা সমাপন করে পিতাকে প্রণাম করতে গেলেন। মূর্তিমতী লক্ষ্মীর মত। মেয়েকে তখনও বিয়ে দিতে পারেননি ভেবে রাজা বিষন্ন হলেন।

সাবিত্রীর পতিব্রতা কথা


সাবিত্রীকে বললেন, মা, তোমার বিয়ের বয়স হয়েছে অথচ তোমার প্রাণিপ্রার্থী হয়ে কেউ আমার নিকট আসেনি। যাকে তুমি পতি হবার যোগ্য বলে মনে করবে তার হাতেই তোমাকে সমর্পণ করব। পিতার কথা শুনে লজ্জিত হয়ে সাবিত্রী ফিরে এলেন। কয়েকদিন পর পিতার নির্দেশমতে, সাবিত্রী বৃদ্ধ মন্ত্রীদের সঙ্গে রথ নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। বিভিন্ন তীর্থস্থান ও রাজর্ষিদের তপোবনগুলো ঘুরে বেড়ালেন তিনি । এইভাবে কিছুকাল ভ্রমণ করে রাজধানীতে ফিরে এলেন। পিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে সেখানে দেবর্ষি নারদকেও দেখতে পেয়ে উভয়কেই তিনি প্রণাম করলেন। অশ্বপতি তখন নারদকে বললেন, “নিজের যোগ্য পতি নিজেই খুঁজে নেবার জন্য সাবিত্রীকে দেশ ভ্রমণে পাঠিয়েছিলাম। এইমাত্র সে ফিরে এলো। তার পর সাবিত্রীর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, “কাকে পতিরূপে বরণ করতে মনস্থ করলে, মা?” দেবর্ষি নারদের সামনে নিজের পতি নির্বাচনের কথায় সাবিত্রী নিতান্ত জড়সড় হয়ে বললেন, “আমি দ্যুমৎসেনের পুত্র সত্যবানকে মনে মনে পতিরূপে বরণ করেছি। শালদেশের রাজা দ্যুমৎসেন। রাজ্যশাসনকালে তিনি অন্ধ হয়ে যান। তখন শত্রুরা তাঁর রাজ্য কেড়ে নেয়। রাজ্যহারা অন্ধরাজা স্ত্রীর হাত ধরে বালক পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে তপোবনে আসেন। এরা সবাই তপঃপরায়ণ, ধার্মিক। সেই দ্যুমৎসেনের পত্রই সত্যবান। সত্যবানের কথা উঠতেই দেবর্ষি নারদ চমকে উঠলেন। তারপর চিন্তান্বিত মুখে রাজা অশ্বপতিকে বললেন, “মহারাজ, কাজটা ভাল হয়নি। সত্যবানকে পতিরূপে বরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সাবিত্রী বড়ই ভুল করেছে। অশ্বপতি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন মুনিঠাকুর, ছেলেটা কি ভাল নয়?” দেবর্ষি বললেন “অতি চমৎকার ছেলে। সত্যবান দেখতে যেমন সুশ্রী, তেমনি বলিষ্ঠ ও তেজস্বী, তাঁর মত জিতেন্দ্রীয়, সত্যবাদী, ধার্মিক যুবক পৃথিবীতে বিরল। তাঁর সবই ভাল, তবে একমাত্র দুঃখের ব্যাপার হল


“আজি হতে যেই দিনে বর্ষপূর্ণ হবে।
সেই দিন সত্যবান নিশ্চয়ই মরিবে।
কহিনু ভবিষ্য কথা, যদি লয় মনে।
যোগ্য দেখি কন্যাদান কর অন্যজনে।”

রাজা তখন নিতান্ত দুঃখের সাথে সাবিত্রীকে বললেন, “সবই তো শুনলে, মা । তুমি অন্য কাউকে পতিত্বে বরণ কর। সত্যবানের একটিমাত্র দোষই তার সমস্ত গুণকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। সাবিত্রী চিন্তিত হলেন বটে, তবে দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, “তা হয়না, বাবা। আমি একবার যখন মনে মনে সত্যবানকে পতিরূপে বরণ করেছি, তখন কিছুতেই দ্বিতীয় পুরুষকে পতি বলে চিন্তা করব না। সত্যবানের আয়ু অল্পই হোক, আর দীর্ঘই হোক, তিনিই আমার পতি। নারদ বললেন, “অশ্বপতি, তোমার কন্যা ধর্মনিষ্ঠ, স্থিরমতি। তাঁকে সংকল্পচ্যুত করতে পারবে না। সত্যবানের সঙ্গেই তার বিয়ে দাও। আলমঙ্গল হোক।

নারদ চলে গেলে অশ্বপতি সাবিত্রীর বিয়ের আয়োজন করতে লাগলেন। শুভ দিন স্থির কৰে জিনিসপত্র এবং পুরোহিত সমেত রাজা সাবিত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তপোবনে পৌছে দুমৎসেনের সঙ্গে দেখা করতে তখন একটি শাল-গাছের তলায় কুশাসনে বসেছিলেন। অশ্বপতি নিজের পরিচয় দিলেন এবং সাবিত্রীকে পতন করতে তাঁকে অনুরোধ করলেন। দ্যমৎসেন বললেন, “সে কি করে হয়। আমি রাজ্যহারা বনবাসী আপনার মত বনবাসের দুঃখ সহ্য করতে পারবে কেন?” অশ্বপতি বললেন, “এ নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। সাবিত্রী আপনাদের থাকতে মোটেই কষ্টবোধ করবে না। সাবিত্রীর সঙ্গে সত্যবানের বিয়ের অনুমতি দিন। দ্যুমৎসেনের অনুমতি পেয়ে সব সাবিত্রীকে সত্যবানের হাতে যথাবিধি সম্প্রদান করে অশ্বপতি রাজধানীতে ফিরে গেলেন। পিতা তপোবন ছেড়ে চলে গেলেন সাবিত্রী রাজকন্যার বেশ পরিত্যাগ করে বল্কল ও কাষায় বসন পরিধান করে তপস্বিনীর বেশ ধারণ করলেন। শ্বশর-শাশুড়ি সত্যবানের সেবা এবং কঠোর তপস্যা করে পতিপরায়ণা সাবিত্রী তপোবনে বাস করতে লাগলেন। তবে এক মুহূর্তের জন নারদের কথা তিনি ভুলতে পারেননি। সত্যবান এক বছর পর তাঁকে ছেড়ে চিরতরে বিদায় নেবেন। বছরের শেষ ঘনিয়ে আসতেই সাবিত্রী ভীষণ বিপদের চিন্তায় ক্রমেই ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। সত্যবানের আয়ুস্কাল আর মাত্র চারদিন। সাবিত্রী স্থির করলেন, এ কয়দিন কঠোর তপস্যায় কাটাবেন, তিন দিন অনাহারে থেকে ব্রত পালন করবেন। পুত্রবধূর সংকল্প শুনে দ্যমৎসেন বললেন, “বৌমা, একি সংকল্প করেছে, তুমি। তিনদিন না খেয়ে থাকতে তোমার খুব কষ্ট হবে। সাবিত্রী বিনীতভাবে বললেন, “আপনি ভাববেন না বাবা, এতে আমার কোন কষ্ট হবে না।”


কঠোর তপস্যায় তিন দিন কাটিয়ে চতুর্থ দিন সূর্যোদয় হতেই সাবিত্রীর দেহমন কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে চাইল। জোর করে নিজেকে সংযত রেখে সাবিত্রী হোম করে শ্বশুরকে প্রণাম করতে গেলেন। শ্বশুর বললেন, “মা, এবার কিছু খেয়ে নাও , ব্রত তো শেষ হয়েছে।” সাবিত্রী বললেন , সূর্যাস্তের পরই তিনি আহার গ্রহণ করবেন। এদিকে বেলা ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে দেখে সত্যবান কাঠ সংগ্রহের জন্য কুঠার হাতে বনে যেতে প্রস্তুত হলেন। সাবিত্রী ব্যাকুল হয়ে তাঁর কাছে ছুটে গিয়ে বললেন, “আজ আমি কিছুইতেই তোমার কাছ ছাড়া হব না, আমাকেও সঙ্গে নিয়ে চল। উপবাসের দুর্বলতা ও বনভূমিতে চলার অনভ্যাসের কথা তুলে সত্যবান সাবিত্রীকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সাবিত্রী নাছোড়বান্দা, তিনি স্বামীর সঙ্গে যাবেনই। অবশেষে পিতামাতার অনুমতি নিয়ে সত্যবান সাবিত্রীকে সঙ্গে করে বনের দিকে রওনা হলেন। চলতে চলতে তাঁরা গভীর বনে প্রবেশ করেছেন। এদিকে বেলা পড়ে এল দেখে সত্যবান কাঠ কাটতে গাছে উঠলেন। সাবিত্রী সর্বক্ষণ তাঁকে লক্ষ করেছেন। কাঠ কাটতে কাটতে সত্যবান অসুস্থ বোধ করে গাছ থেকে নেমে বললেন, “সাবিত্রী, আমার মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। শরীর ভেঙ্গে পড়ছে, বুক যেন ফেটে যাচ্ছে। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।” এ কথা বলেই সত্যবান গাছতলায় শুয়ে পড়লেন। সাবিত্রী ধীরে ধীরে স্বামীর মাথাটি কোলে তুলে নিয়ে বসলেন। সঙ্গে সঙ্গে সত্যবান হয়ে গেলেন জ্ঞানশুন্য।। সাবিত্রী স্থিরভাবে বসে ভাবছেন
“অবশ্য আসিবে হেথা কৃতান্ত-কিঙ্কর,
দেখিব কেমনে লয় আমার ঈশ্বর।”

কিছুক্ষণ পর সাবিত্রী দেখলেন একজন কৃষ্ণকায় ভয়ঙ্কর বিরাট পুরুষ সামনে দাড়িয়ে সত্যবানকে একদৃষ্টে চেয়ে দেখছেন। সাবিত্রীর প্রাণ কেঁদে উঠল। ধীরে ধীরে স্বামীর মাথাটি কোল থেকে নামিয়ে বিনীতভাবে উঠে দাঁড়ালেন সাবিত্রী। কম্পিত হৃদয়ে করজোড়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কে? কিজন্য এখানে এসেছেন?” সেই ভয়ঙ্কর পুরুষটি গম্ভীরভাবে বললেন, “তুমি। পতিতা ও তপঃপরায়ণা, তাই তোমার কথার উত্তর দিচ্ছি। আমি যম। আজ তোমার পতি সত্যবানের আয় শেষ হয়েছে। তাই তাকে নিয়ে যাবার জন্য এসেছি। ” সাবিত্রী বললেন, “শুনেছি, এসব কাজ আপনার দূতেরাই করে থাকে, এক্ষেত্রে আপনি এলেন কেন?” যম বললেন, “সত্যবান সদগুনভূষিত পরম ধার্মিক। তাকে নেবার জন্য দূতদের পাঠালে অন্যায় হবে। তাই আমি নিজে এসেছি।” এই বলে যমরাজ সত্যবানের দেহ থেকে আত্মা বের করে নিয়ে দক্ষিণ দিকে যাত্রা করলেন।


সাবিত্রীও যমরাজকে ব্যাকুলভাবে অনুসরণ করলেন। সাবিত্রীকে পশ্চাতে আসতে দেখে যমরাজ বললেন, “সাবিত্রী, তুমি পণ্যবতী, তোমার জন্য তোমার স্বামীর উর্ধ্বলোকে গতি হবে। তোমার যা করণীয় তা সবই তুমি করেছ। এখন ফিরে গিয়ে সত্যবানের দেহের সৎকার করগে।” সাবিত্রী বললেন, “স্বামী যেখানে যান স্ত্রীরও সেখানে যাওয়া কর্তব্য ও ধর্ম। সুতরাং আমার স্বামীর সঙ্গে আমিও যাচ্ছি। তপস্যা ও ব্রত প্রভাবে এবং আপনার অনুগ্রহে সব জায়গায় যাবার মত শক্তি আমার হয়েছে। যমরাজ বললেন, “সাবিত্রী, তোমার কথা শুনে আমি তুষ্ট হয়েছি। সত্যবানের জীবন ছাড়া তোমার যা ইচ্ছা বর প্রার্থনা কর।” সাবিত্রী বললেন, “হে ধর্মরাজ যদি বর দেবেন তবে এই বর দিন যাতে আমার অন্ধ শ্বশুর পুনরায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান।” যমরাজ বললেন, “তাই হবে, তুমি পরিশ্রান্ত হয়েছে, এখন ঘরে ফিরে যাও।” সাবিত্রী বললেন পতির সঙ্গে কী কখনও ক্লান্তি বোধ করে? পতিই যে তার একমাত্র গতি।” যমরাজ সাবিত্রীর কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকে আর একটি বর দিতে চাইলেন। সাবিত্রী এবার শ্বশুরের হৃত- রাজ্য উদ্ধারের বর চেয়ে নিলেন। এরপরও সাবিত্রীকে একসঙ্গে আসতে দেখে যমরাজ তাঁকে পুনরায়- বর প্রার্থনা করতে বলেন। সাবিত্রী এবার তাঁর অপর পিতা অশ্বপতির জন্য শতপুত্র প্রার্থনা করলেন। যমরাজ বললেন, “তাই হবে। তোমার একশত সুন্দর ভাই হবে।”


“দেখ তুমি বহুদুরে এসে গেছ, এখন তুমি ফিরে যাও।” সাবিত্রী বললেন, “আমি তো আমার স্বামীর কাছেই রয়েছি, দূর আর কোথায়? তাছাড়া আপনার মত ন্যায়পরায়ণ ধার্মিক তো ত্রিভুবনে কেউ নেই। আপনি ধর্মরাজ, আপনার সঙ্গ তো অতি দুর্লভ।” সাবিত্রীর কথায় যমরাজ অত্যন্ত তুষ্ট হয়ে তাঁকে আর একটি বর দিতে চাইলেন। সত্যবানের জীবন ছড়া সাবিত্রীকে যে কোন বর প্রার্থনা করতে বললেন। এবার সাবিত্রী নিজের জন্য একশত পুত্র প্রার্থনা করলেন। যমরাজ খুশি হয়ে বললেন, “তাই হবে মা, তুমি শতপুত্রের জননী হবে। এখন ঘরে ফিরে যাও, আর এসো না।” সাবিত্রী সঙ্গ ছাড়ছে না দেখে যমরাজ আবার তাঁকে বর দিতে চাইলেন। সাবিত্রী বললেন,“সাধুদের সান্নিধ্যে মানুষ মঙ্গল লাভ করে থাকেন। সজনের বাক্য কখনও মিথ্যা হয় না। আপনি আমাকে শতপুত্রের জননী হতে বর দিয়েছেন, আবার আমার স্বামী সত্যবানকেও নিয়ে যাচ্ছেন। তম পতিব্রতা, সত্যবানকে ফিরিয়ে না দিলে আমি জননী হব কেমন করে? যমরাজ, স্বামীকে ছেড়ে আমি জীবন ধারণ করতে চাইনে, এমন কি স্বর্গেও যেতে চাইনে। হে ধর্মরাজ, সত্যবানকে ফিরিয়ে দিন, এই বর চাচ্ছি।” যমরাজ প্রসন্নচিত্তে সত্যবানকে ফিরিয়ে দিয়ে সাবিত্রীকে বলে গেলেন

“তোমার গুণেতে বশ হইলাম আমি।
যাও শীঘ্র গৃহে, যাও লয়ে নিজ স্বামী।।
পৃথিবীতে ভোগ কর পরম কৌতুকে।
অন্তকালে দুইজনে যাবে বিষ্ণুলোকে।”

সাবিত্রী ফিরে এলেন সত্যবানের দেহের নিকট। পরম শ্রদ্ধাভরে তাঁকে কোলে তুলে নিয়ে বসলেন। সত্যবান চোখ মেলে বললেন, “একি, অনেক সময় ঘুমিয়েছি তো। সাবিত্রী, তুমি আমায় জাগাওনি কেন? আর আমাকে ধরে যে লোকটি টানছিল, সেই কালো লোকটি গেল কোথায়?” সাবিত্রী বললেন, “একটু বেশি সময় ঘুমিয়েছ এই তো, তাতে আর কি হয়েছ। যে লোকটার কথা বলছিলে তিনি যমরাজ। একটু আগেই চলে গেছেন। যাক, সে সব কথা কাল দিনের বেলায় বলা যাবে। এখন রাত হয়ে গেছে, চল শীঘ্র বাড়ি যাই। বোধ করি বাবা মা এতক্ষণ ব্যস্ত হয়ে আমাদের খুজতে বেরিয়ে পড়েছেন।” সাবিত্রী ও সত্যবান নিরাপদে আশ্রমে ফিরে এলে সবাই স্বস্তি বোধ করলেন। সাবিত্রীর মুখে সেদিনকার সমস্ত ঘটনা শুনে আশ্রমবাসীরা তাঁর সতীত্ব ও তপস্যার প্রশংসা করতে লাগলেন।

সাবিত্রীর তুল্য নাহি এ তিন ভুবনে।
দুই কুল উদ্ধারিল আপনার গুনে।।
মৃতজন প্রাণ পেল, অন্ধ চক্ষ পান।
অপুত্রক ছিল রাজা, হল পুত্রবান।।
জন্মাইল আপনার শতেক সন্ততি।।
নিজ রাজ্য উদ্ধারিল সতী গুণবতী।।
এই হেতু সর্বজন ভুবন ভিতরে।।
সাবিত্রী সমান হও আশীর্বাদ করে ।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *