সালোকসংশ্লেষণের ধারণা কি সাম্প্রতিক নাকি বৈদিক?

Uncategorized
★ সালোকসংশ্লেষণের ধারণা কি সাম্প্রতিক নাকি বৈদিক? 
উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়  ক্লোরোফিলের সাহায্যে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) ও মূল দ্বারা শোষিত পানিকে (H2O) ব্যবহার করে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে (সূর্যের শক্তিকে রাসায়নিক শক্তি রূপে আবদ্ধ করে) খাদ্যপ্রস্তুত (শর্করা) করে। ১৮১৮ সালে  সালোকসংশ্লেষণ বা Photosynthesis শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী বার্নেস। ১৯০৫ সালে ব্ল্যাকম্যান এ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করেন।  একটি আলোক নির্ভর, অন্যটি আলোক নিরপেক্ষ। 
আলোক পর্যায়ে জল (H2O) ভেঙ্গে ATP ও NADH+H+ (রাসায়নিক শক্তি উৎপন্ন হয়) যা পরে অন্ধকার পর্যায়ে শর্করা (Carbohydrates) তৈরিতে কাজে লাগে। 
বেদের মধ্যে সালোকসংশ্লেষণ শব্দটি না থাকলেও এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। বেদের ভাষা অত্যন্ত প্রাচীন ও বেশ কিছু শব্দের অর্থ নির্ণয় যথেষ্ট  মেধাসাপেক্ষ। ইউরোপীয় পণ্ডিতগণ বেদের অর্থ নির্ণয় করতে গিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড করেছেন। তাদের ব্যাখ্যা পড়লে বৈদিক সমাজকে সেই আদিমকালের সমাজ বলে মনে হবে। এসকল পণ্ডিতদের সমস্যা হল, এঁরা প্রাচীন ভাষ্যকারদের ভাষ্য পড়েন নি। এঁরা নিজেরাও বৈদিক সংস্কৃত ও সংস্কারের সাথে তেমন পরিচিত নন। ফলে তারা নানা কদর্থ উৎপন্ন করেছেন। 
তাঁদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,
“আমরা সাধারণতঃ দেখিতে পাই, লোকে এইগুলির অতি অদ্ভুত ইংরেজী অনুবাদ করিয়া থাকে। অনুবাদকগণ অনুবাদের জন্য প্রাচীন দার্শনিকগণের ও তাঁহাদের টীকাকারগণের সহায়তা গ্রহণ করেন না, আর নিজেদেরও এত বেশী বিদ্য নাই যে, নিজে-নিজেই ঐগুলি বুঝিতে পারেন।”
এমনকি কিছু কিছু ভারতীয় বৈদিক স্কলারও এধরণের ভুল করেছেন। যেমন, অষ্টাদশ শতাব্দীতে গুজরাটের এক বেদজ্ঞ সংহিতাভাগের অর্থ করতে গিয়ে কখনো ব্রাহ্মণভাগকে বেদই স্বীকার করেননি আবার কখনো মন্ত্রের অর্থে নতুন শব্দ আমদানি করেছেন। আবার কখনো বিজ্ঞানের সাথে মিলাতে গিয়ে অদ্ভুত সব ধারণার অবতারণা করেছেন। 
যাই হোক, বেদের সংহিতাভাগে সালোকসংশ্লেষণের স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। ঋগ্বেদ সংহিতার শাকল শাখার ৮ম মণ্ডলের ৪৩ সুক্তের ৯ম মন্ত্রে বলা হয়েছে, 
“অপস্বগ্নে সধিষ্টব সৌষধীরনু রুধ্যসে গর্ভে সঞ্জায়সে পুনঃ।।’
(ঋগ্বেদ সংহিতা, ৮/৪৩/৯)
সরলার্থঃ হে অগ্নি! জলের মধ্যে তোমার প্রবেশের স্থান আছে। সেখানে প্রবেশ করে তুমি ওষধীগণকে অবরোধ করো এবং তাদের গর্ভে পুনঃ জন্মগ্রহণ করো। 
আলোক শক্তি ব্যবহার করে জল (H2O)-র ভাঙনের ফলে H+ উৎপন্ন হওয়াকে বলে পানির সালোক বিভাজন বা ফটোলাইসিস। এই প্রক্রিয়া অক্সিজেন (O2) উৎপন্ন হয়ে বায়ুতে নির্গত হয় এবং উৎপন্ন H+, NADPH+ H+ সৃষ্টি করে। এটিকে বলে অত্মীকরণ শক্তি। এটি তৈরি না হলে শর্করা তৈরি হবে না। এই মন্ত্রে সুস্পষ্ট ভাবে এটি বলা হয়েছে কারণ অগ্নি (আলোকশক্তি) এখানে জলের মধ্যে প্রবেশ করে অর্থাৎ জলকে ভাঙে আবার আত্মীকরণ শক্তি উৎপন্ন করে অর্থাৎ গর্ভে জন্মগ্রহণ করে। 
এছাড়াও ঋগ্বেদ সংহিতার ২য় মণ্ডলের ১ম সুক্তের ১৪ নং ঋকে বলা হয়েছে,
“ত্বে অগ্নে বিশ্বে অমৃতাসো অদ্রুহ আসাদেবা হবিরদন্ত্যাহুতম্। 
ত্বয়া মর্তাসঃ স্বদন্ত আসুতিং ত্বং গর্ভো বীরুধাং জনিষে শুচিঃ।।” (ঋগ্বেদ সংহিতা ২.১.১৪)
সরলার্থঃ হে অগ্নি (আলোকশক্তিরুপে)! তুমি উদ্ভিদের গর্ভরুপ (প্রাণশক্তি) শক্তি হও এবং প্রাণিগণকে অন্নাদির স্বাদ প্রাপ্ত করাও।
কেউ হয়ত বলবেন, “আপনারা জোড় করে এসব অর্থ বানাচ্ছেন। ” আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ১৪শ শতাব্দীর টীকাকার মল্লিনাথ এই (২/১/১৪) মন্ত্রটির অর্থ করেছেন এভাবে,
“অগ্নিরোষধিষু ক তেজো নিধায় রবিরস্তং যাতীতি আগমঃ।
দিনাম্ভে নিহিতং তেজ সবিতেব হুতাশনঃ।।” 

অর্থাৎ অগ্নি (শক্তি) রূপে সূর্য থেকে তেজ ওষধীসমূহ/উদ্ভিদসমূহ দ্বারা আবদ্ধ হয়। এই যে তেজ তা আসলে সূর্যেরই তেজ। 
নিরুক্ত ৭/১৭/৯-এ সূর্যের শক্তিকেও “অগ্নি” বলা হয়। অর্থাৎ অগ্নি বলতে এখানে সূর্যের আলোকশক্তিকেই নির্দেশ করছে।
প্রচারেঃ
SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি।
সনাতন শাস্ত্র ও দর্শন প্রচারে বদ্ধপরিকর।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *