সি, আর, দত্ত-১: কাছে থেকে দেখা
দুর্দান্ত সাহসী অথচ শিশুর মত সরল মানুষ
জাগতিক নিয়মে মেজর জেনারেল (অব:) সি,আর,দত্ত, বীরউত্তম সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন। তবে তিনি থাকবেন, মানুষের মাঝে, সবার ভালবাসায়। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, জেনারেল দত্ত ততদিন থাকবেন। মানুষের কাছে তাঁর বহুবিধ পরিচয়, তিনি সেক্টর কমান্ডার, বিডিআর এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট ও বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান, পূজা পরিষদ ও ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা, আরো কত কি? এসব ছাপিয়েও তাঁর বড় পরিচয় তিনি একজন দুর্দান্ত সাহসী, শিশুর মত সরল, প্রকৃতির মত নির্মল, ভালো মানুষ ছিলেন। এত উঁচু মাপের মানুষ, নির্লোভ, নির্ভেজাল, আগাগোড়া সৎ, কর্তব্যে নিষ্ঠা, সফল প্রশাসক, চরিত্রবান, সাধুতা, অকপট, মনের গহীনে ধার্মিক, আগাগোড়া অসম্প্রদায়িক জেনারেল দত্ত’কে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিলো।
পাকিস্তানে আমলে বাঙ্গালীদের তেমন সেনাবাহিনীতে নেয়া হতোনা (এখনো তেমন নেয়া হয়না), জেনারেল দত্ত তখন অফিসার। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে তাঁর বীরত্বগাঁথা, তাঁকে সামনে নিয়ে চট্টগ্রামে শোভাযাত্রা, মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার, বিডিআর’র প্রধান, এসব ঐতিহাসিক ঘটনা এবং সবার জানা। সেদিক যাবার ইচ্ছে নেই! আমি বরং তাঁর সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্যের গল্প শুনাবো। একজন মেজর জেনারেল কিভাবে তাঁর সগোত্রীয় মানুষের কল্যানে জড়িয়ে পড়লেন, কেন তাঁকে কার্জন হলের সামনে আততায়ীর গুলি খেতে হলো, এসব কাহিনী আসবে। না চাইলেও এতে বাংলাদেশে নিপীড়িত হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা এসে যাবে। জেনারেল দত্ত, যাঁকে আমরা ‘কাকু’ ডাকতাম, তাঁর সাথে আমার পরিচয় হয়তো ১৯৭৮’র শেষে বা ১৯৭৯’র শুরুতে। তখন তিনি পুরোদমে জেনারেল।
তাঁর সাথে আমার শেষ দেখা ২১শে সেপ্টেম্বর ২০১৯। শুনলাম, শীতে তিনি ফ্লোরিডা ছোট কন্যার সাথে থাকবেন, তাই নিউইয়র্ক থেকে চলে যাচ্ছেন। ছোটকন্যা হ্যাপী, ভালো নাম কবিতা দাশগুপ্ত। ওঁর বিয়ের সময় আমরা ঢাকা থাকতাম, জয়ন্ত সেন দিপু বিয়েতে প্রচন্ড পরিশ্রম করেছিল। রাজাকে কল দিলাম। রাজা, মানে চিরঞ্জীব দত্ত, কাকু’র একমাত্র পুত্র। দাঁতের ডাক্তার, বিশেষজ্ঞ। বললাম, কাকু’র সাথে দেখা করতে আসবো। রাজা সময় দিলো। জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার ও আমি গেলাম। অনেকক্ষন ছিলাম। জেনারেল দত্ত’র তখন মানুষ চিনতে অসুবিধা হতো। জিজ্ঞাসা করলাম, কাকু, বলেন তো আমি কে? বললেন, ‘শিতাংশু’। রতনকেও চিনলেন। প্রথমে বুঝিনি, রতনের সময় বুঝতে পারলাম, ‘তুলি’ পেছন থেকে কাঁকুকে ইঙ্গিতে চিনতে সাহায্য করছে। তুলি দত্ত, রাজার স্ত্রী, জেনারেল দত্তের পুত্রবধূ। অতিথি বৎসল, ভালো মেয়ে, সবাইকে সহজেই আপন করে নিতে জানে।
সেই শেষ দেখা। রাজা জানালো, বাবা শীতে ফ্লোরিডা থাকবে, গরমে নিউইয়র্কে ছেলেমেয়ের সাথে। কোবিড-১৯’র কারণে জেনারেল দত্ত গরমে নিউইয়র্কে আসতে পারেননি। আর কখনো আসবেন না? ১৯৯০-তে আমি আমেরিকা আসি। কাকু-কে জানালাম। তিনি বললেন, আমার বড়মেয়ে আমেরিকা থাকে। জামাই ডাক্তার। ‘পশ’ এলাকায় থাকে। তিনি জানতে চাইলেন, তুমি কোথায় উঠবে? বললাম, জানিনা। বললেন, তুমি আমার মেয়ের ওখানে উঠতে পারো, আমি বলে দেবো। আবার বললেন, ওঁরাতো অনেক দূরে থাকে। যাহোক, ঠিকানা, টেলিফোন দিয়ে দিয়েছিলেন। কাকুর বড় মেয়ে মহুয়া দত্ত, স্বামী দেবব্রত দত্ত, বড় ডাক্তার। তাদের বাড়ীতে আমার ওঠার সুযোগ হয়নি। কথা হয়েছে, যাওয়া হয়নি। জেনারেল দত্তের মেঝো মেয়ে চয়নিকা দত্ত, টরন্টো থাকেন। এটর্নি। ঢাকা থাকতে কিছু সময়ের জন্যে চয়নিকা-কে দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, কখন চলে এসেছেন, টের পাইনি। তবে হ্যাপী ও রাজাকে দেখেছি। রাজা বহুদিন গাড়ী চালিয়েছে, পেছনে কাকু ও আমি বসা। (চলবে). Published at Weekly Jonmobhumi, NY, today, 26 Nov 2020. Every Thursday, you will get another episode, at least next two months or more. Thank you.