সেই অনাগত দিনের দিকেই তাকিয়ে থাকলাম — অনিমিত্র চক্রবর্তী

অনিমিত্র চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গ ভারত

কথায় বলে, ঠেকায় পড়লে বিড়ালও গাছে ওঠে, উপরোধে ঢেঁকিও গেলা হয়। আবার এটিও ঠিক যে দেওয়ালে পিঠ ঠেকলে কম্যুনিস্টরাও অন্যান্য icons appropriate করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে পিতৃভূমি রক্ষার্থে সোভিয়েত ইউনিয়নকেও এককালের ধিক্কৃত Peter the Great কে আনা হয়েছিল; দেশের লোকের মধ্যে দেশপ্রেম জোগাতে লেনিন, যুগশভিলি স্তালিনও কম পড়েছিলেন। কিন্তু একি!! নাথুরামের উত্তরসূরি না হয় অতি সহজেই বোঝা গেল। এবং নাথুরাম অন্তত আমার হৃদয়েই আছেন এবং থাকবেন আজীবন। কিন্তু ক্ষুদিরামের উত্তরসূরি!! কে!? ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গের স্খলিত দো-আঁশলা কম্যুনিস্টরা!!  কোন গণিতের সূত্রে? ক্ষুদিরাম কোন আমলে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র তথা মার্কসবাদ সর্বশক্তিমান কারণ ইহা বিজ্ঞানের ক্লাসের মনোযোগী ছাত্র ছিলেন? তিনি তো অনুশীলন সমিতির সাথে জড়িত ছিলেন ওতপ্রোতভাবে।

গতকাল social media য় বিভিন্ন বামপন্থী গ্রূপে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জয়গান করা হল। নিঃসন্দেহে তাঁকেও appropriate/ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানানোর এক ভয়ানক প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু অবিভক্ত সিপিআই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁর বিরুদ্ধে মতাদর্শগত বির্তকের পরিবর্তে যে ব্যক্তি কুৎসার বন্যা বইয়ে দিয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন করলেই উত্তর আসে ১৯৭০ সালেই তো সিপিআইএম এ সম্পর্কে তার ভুল স্বীকার করে নিয়েছিল। কিন্তু ওই একই সময়ে সিপিআইএম-এর জ্ঞাতিশত্রু নকশালপন্থীদের মহামহিম কমঃ সরোজ দত্ত একটি দলিল লিখেছিলেন একই ব্যক্তি অর্থাৎ শ্রী সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে – “নেতাজি কি করে পেঁয়াজি হয়েছিল” এবং তাতে দেখানো হয়েছিল কিভাবে হিটলারের কলের পুতুল সুভাষচন্দ্র স্তালিনের তেজে থরথর করে কেঁপেছিলেন এবং স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে নাজিদের পরাজয়ের পরে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন। এই মূল্যায়নটিও কি প্রত্যাহার করা হয়েছে!? যদি তাও না হয় এবং এটিকে fringe notion বলে দাগানো হয়, তাহলে সাভারকরের মুচলেকা নিয়ে মুচমুচে কৌতুক বোধ করা কম্যুনিস্টদের জেনে রাখা প্রয়োজন যে ১৯৬৬ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী (অর্থাৎ তাঁর মৃত্যুর দুদিন পর) ভারতীয় সংসদ থেকে দলমতনির্বিশেষে যে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল সেটি উত্থাপন করেছিলেন সিপিআই-এর প্রবাদপ্রতিম সাংসদ ডঃ হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং এক্ষেত্রে তিনি যাঁর কাছ থেকে প্রথম সমর্থন পেয়েছিলেন তিনি হলেন তৎকালীন সিপিআই-এর চেয়ারম্যান কমঃ শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গের যিনি শ্রী বিনায়ক দামোদর সাভারকারকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রামের এক অন্যতম বর্ণময় চরিত্র বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্ত তার পরেও Left Front-এর পক্ষ থেকে সাভারকারের শ্রাদ্ধ করায় কোন ক্ষান্তি নেই এবং সেই একই সিপিআই বামফ্রন্টের অন্যতম সদস্য।

এবার ফেরা যাক ক্ষুদিরামের প্রশ্নে। ক্ষুদিরাম অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন, মা কালীর সম্মুখে দীক্ষাগ্রহণ করেছিলেন বুকের রক্ত চিরে ও মায়ের উদ্দেশ্যে বিল্বপত্রে সমর্পণ করে। একান্তভাবেই হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতি এবং অনুশীলন সমিতিতে হিন্দু-ব্যতীত অন্যায় কারোর প্রবেশ, সদস্যতা দূরে থাক, নিষেধ ছিল। তবুও না হয় বোঝা যেত – যদি শ্রী ক্ষুদিরাম বসু ১৯৩০-এর দশকে অনুশীলন সমিতির সদস্য থাকতেন এবং আন্দামানে গিয়ে ব্রিটিশ সরকারের উৎসাহে সেখানে ডঃ নারায়ণ রায়ের Communist Consolidation – এ অংশগ্রহণ করতেন।  এই consolidation গড়ে তোলার পেছনে যে ব্রিটিশদের এক বিশেষ উৎসাহ ছিল – জাতীয়তাবাদ থেকে আন্তর্জাতিকতাবাদের দিকে বিপ্লবীদের ঠেলে দিয়ে সরকার বিপদমুক্ত হতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল – তার সবিশেষ বিবরণ পাওয়া যায় সেযুগের আর এক ভয়ঙ্কর বিপ্লবী গোষ্ঠী বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্য, প্রখ্যাত বিপ্লবী শ্রী অমলেন্দু ঘোষের কলমে।

কিন্তু ক্ষুদিরাম সমিতির সদস্য একেবারে প্রারম্ভে – যখন স্বামী বিবেকানন্দের ক্ষাত্রশক্তির প্রচন্ডতা ও অরবিন্দের পান্ডিত্য (উত্তরপাড়া বক্তৃতা – বিশেষ দ্রষ্টব্য) বিচারাধারার মূলকেন্দ্র ছিল – এবং তাতে মার্কসবাদের ছায়াটুকুও দেখা যায়নি। সিপিআইএম-এর পরম শ্রদ্ধেয় কাকাবাবু অর্থাৎ মুজফ্ফর আহমেদ সাহেবের লেখায়, অনুশীলন সমিতির সদস্য ও পরবর্তীকালের কম্যুনিস্ট পার্টির সভ্য যথা গোপাল হালদার, সতীশ পাকড়াশী, নিরঞ্জন সেনগুপ্ত, সরোজ মুখোপাধ্যায়ের লেখায় অনুশীলন সমিতির ব্রিটিশ-বিরোধী ভূমিকা স্বীকার করেও তা যে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট ছিল -এর বিবরণ পাওয়া যায় সবিস্তারে। সেই সাম্প্রদায়িক অনুশীলন সমিতির সাম্প্রদায়িক ক্ষুদিরাম বসুর উত্তরসূরী আজকের কমরেডরা!!

কমরেড, ভুলই বা কি আর ঠিকই বা কি সেটা কি বুঝিয়ে দেবেন? যদি সেলিম সাহেব ঠিক হন তাহলে কি বিগত যুগের কমরেডরা ভুল ছিলেন!? এতো confusion কেন? আপনাদের আন্দোলনে icons কম পড়িয়াছে যে হাত বাড়াইতেছেন? এরকম চললে তো আপনাদের পরে প্রজন্মের slogan হবে -আমাদের বড় প্রয়োজন/তাই সাভারকার আপনজন –

সেই অনাগত দিনের দিকেই তাকিয়ে থাকলাম।

লেখক: অনিমিত্র চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *