তাকে টেকনা পাকনা শিশুবক্তা যে যাই বলুন না কেন স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পুর্তিতে বাঙালি জাতির প্রধানতম অর্জন হল এই রফিকুল ইসলাম মাদানী। মাত্র অষ্টম শ্রেণীর পুঁথিগত যোগ্যতা নিয়ে নেত্রকোনার নিভৃত পল্লী থেকে সে এখন বাঙালি জাতির আধ্যাত্মিক নেতা বনে গেছেন। অধুনা তার ওয়াজ শুনতে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কৃষিবিদ উচ্চ শিক্ষিতরা হাজারে হাজারে সমবেত হন। সে আকৃতিতে বামন হলেও কথা বার্তায় ধেনে মরিচ। অল্প বয়সেই সে বুঝে গিয়েছিল মাদ্রাসা লাভার এই উর্বর জনপদের বহু আবালদের ধর্মান্ধতাকে পুঁজি করে কিভাবে মুখ বেচার ব্যবসা করে রাতারাতি ধনী হওয়া সম্ভব।
হাজার হাজার মানুষের মজলিসে মাদানী এমন কথা বলত যে মুমিনগনের পায়ুপথে শুকনা মরিচের গুড়া পড়ত। সেই ঝাল ও ঈমানি জোসে তারা ধর্মের চুলকানিতে নারে তাকবির বলে তারা লাফাইতো আর লাফাইতো। আর গামছায় পুনঃ পুনঃ মুখ মুছে শিশুবক্তা চুটিয়ে সেই মজা উপভোগ করত। যে দেশে শস্যের চেয়ে টুপি বেশী সে দেশে মাদানী সোদানীরাই তো জাতির ভবিষ্যত। এরাই জাতিকে নেতৃত্ব দেবে।
মাদানীর মুঠোফোনে পর্ণ ছবি তাতে কি তিনি আমাদের নেতা। মামুনুলের রিসোর্টের যৌন বিলাশের ঘটনায় জাতি কান দিতে চায় না। হেফাজতের যুদ্ধ ময়দানে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত তিনি, অন্যের বউ নিয়া একটু আমোদ ফুর্তি করতেই তো পারে। এই মনোভাব অনেকেরই। বনুকুরাইজার যুদ্ধে কি আমাদের জেহাদীরা গনিমতের মাল ভোগ করে নাই,কিতাবের বিধানে তো এইসব পরিস্কার করা আছে। কেউ কেউ তো মামুনুলকে ধর্মের হেফাজতের প্রধান সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ, কেউ কেউ খলিফা ওমর অথবা আলী বলে সম্বোধন শুরু করেছেন! আমি বাজি ধরে বলতে পারি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়তার ভোট হলে এই দুইজনই হবেন বাঙালি জাতির প্রধান কাণ্ডারি। সঙ্গে থাকবেন রাজ্জাক বিন ইউসুফ, মাওলানা আজাহারি প্রমুখ।এদেরকে নিয়েই জাতি এগিয়ে যেতে চায়।
ভাবতে ভাল লাগে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এসেছে। আমাদের দেশে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম দুটি বৃহৎ সেতু নির্মিত হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থাতে প্রভূত উন্নয়ন ঘটেছে, রাজধানী ঢাকার স্থাপনা চিত্র বদলে গেছে, সেখানে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে মেট্রোপলিটন রেল পথ তৈরি হচ্ছে, দেশে বিদ্যুত সমস্যা আর নেই, স্বাধীনতার পর আমাদের মাথা পিছু আয় ছিল মাত্র ১৮০ ডলার সেই অংক বেড়ে গিয়ে এখন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত , পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তানকে পিছনে ফেলে সবার উপরে ২০৬৪ ডলার। বাংলাদেশে নারী পুরুষরা সমান্তরাল কাজ করে পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির চাকা বদলে দিয়েছে। মানুষের বেতন বেড়েছে। শ্রমের মুল্য উচ্চস্তরে চলে গেছে। দেশে দারিদ্র্যতা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের সকল জনসাধারণ এখন ভাল করে খেতে পারেন, পরতে পারেন, তারা এখন সাধ্যমত ভ্রমন করেন, ফুর্তি করেন। ধরে নিলাম এই মামুনুল মাদানী সোদানীরা দেশের ক্ষমতায় এলেন, জনগনের প্রাণের দাবী ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হলো। তারপর কি হবে? সঙ্গে সঙ্গেই দরিদ্র ও নিম্ন বৃত্তের নারীরা শরীয়ত মোতাবেক ঘরে আটকে যাবেন, তারা আয় উপার্জনের পথ হারাবেন। বাংলাদেশের আর্থিক প্রাণশক্তি গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষের গড় পরিবার আয় কমে যাবে। উগ্রবাদি দেশ হিসেবে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষার প্রধানতম দেশে হিসেবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বন্ধ হয়ে যাবে। প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সংঘাত লেগে থাকবে ,আমরা ভারতে বানিজ্যিক সুবিধা বঞ্চিত হবো। আমাদের কৃষি ও শিল্প ঘাটতি পুরণে ভারত সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসবে না। আমরা অল্প পয়সাতে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা সুবিধা পাব না। বৈদেশিক রাষ্ট্রে বাঙালিদের অভিবাসন কমে যাবে। দেশের ভেতর জঙ্গিবাদী শক্তি কতৃক পাকিস্তানের মতো বোমাবাজি সংঘাত অত্যাচার চলতে থাকবে। মানুষের স্বাধীনভাবে চলাফেরার মৌলিক অধিকার পদদলিত হবে। আফগানিস্তানের মতো সবাইকে জোর করে দাঁড়ি রাখতে বাধ্য করা হবে, নারীদের সবাইকে বোরকার নীচে চলে যেতে হবে। জনাব তখন কি আর আজকের মতো থাকতে পারবেন? উদাহরণ দেই। আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের সময় যে ধর্মের অরাজকতা ও অর্থনৈতিক ধ্বংস নেমে এসেছিল সেটা অনুগ্রহপূর্বক একটু খুঁজে দেখুন। আজও আফগানিস্তান পিঠ সোজা করে দাঁড়াতে পারে নাই। পাকিস্তানের জনগণের মধ্যেও এই ধর্মান্ধতা ও উগ্রপন্থা তাদের অর্থনীতিকে আজ কোথায় নিয়ে গেছে একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন। পাকিস্তানের অর্থনীতি এখনও ভিক্ষুকের অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়ন ডলারের আর্থিক খয়রাতি সাহায্যে তাদের দিন গুজরান হতো, এখন মধ্যপ্রাচ্যের সাহায্য সহযোগিতায় বেঁচে আছে। মাদানি মামুনুলের মতো অশিক্ষিত মুর্খরা কি আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার সামান্যতম ক্ষমতা রাখেন? এরা শুধু জানে উগ্রবাদের বিরানভূমিতে গলাকাটা আর হিংস্রতা করে মাল কামানো। পৃথিবীর ধর্মভিত্তিক কোন রাষ্ট্রই কখনো এগিয়ে যেতে পারে নাই। ব্যতিক্রম হলো সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইনের মতো ইসলামি দেশের শক্তি শুধু ভূগর্ভস্থ তেল। এই তেল কিছুদিনের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে। তারপর? এসব দেশের রাষ্ট্র পরিচালনা করে ভাড়াটে ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশের লোকজন। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সে সুযোগ নেই। আমাদের তো সৌদিদের মতো তেল নেই। আমাদের অর্থনীতি এখন তাজা কিন্তু টেকসই ( sustainable) নয়। এইসব গাধা গরুর দল যদি আপনাদের পঞ্চাশ বছরের অর্জন হয়ে থাকে তাহলে জনাব আপনাদের কপালে শনি আছে। কথায় আছে সুখে থাকতে ভুতে কিলায়। আপনাদের হয়েছে তাই। এইসব পায়ুনুলের পিছন ছেড়ে নিজের বিচার বুদ্ধি জাগ্রত করে একটু ভাবুন এইসব মুর্খ মাদানিরা আপনাদের কোথায় নিয়ে যেতে চায়?