স্বপন কাকার বিদায়ী যাত্রা-খোলা চিঠি

Uncategorized
স্বপন কাকার বিদায়ী যাত্রা-খোলা চিঠি
হঠাৎ ২২/১২/২০২১ তারিখ বেলা ২.৩০ ঘটিকার সময় নিপুল দার মোবাইল রিসিভ করলাম। কেমন আছেন কথা বলতেই কেঁদে কেঁদে বলছে খারাপ সংবাদ আছে, তখন আমার বুক ধড়ফড়ে উঠল আমি বললাম কি সংবাদ? বললো স্বপন মারা গেছে। (কারণ সে তারই সাথে পড়াশুনা করত) আমি থমকে গেলাম সাথে সাথে অফিস থেকে বাসায় চলে গেলাম। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল পড়ছে। বললাম ইশ্বর তুমি কি শুনালে এক উজ্জল নক্ষতের বিদায়, এক সোনার ছেলের বিদায়, এক অপুরণীয় ক্ষতি, বাড়ীর ছোটদা সুকুমার বালা তার মেঝ ছেলে স্বপন কুমার বালা। সে ভাতিজাকে কাকা বলে ডাকতাম। সে সাতপাড় দীননাখ গয়ালী চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে ৫ম স্থান অধিকার করে ( 5th ষ্টান্ড) করে আশে পাশের গ্রামে/থানা/জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ দেখতে আসে স্বপন কুমার বালাকে। সাতপাড় স্কুল থেকে গোন্ড মেডেল প্রদান করে। ১৯৮৩ সালে ঢাকা কলেজ বানিজ্য শাখা থেকে ঢাকা বোর্ড থেকে ৩য় স্থান অধিকার করে (3rd ষ্টান্ড) করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে অনার্সে ফাস্ট ক্লাস ৪র্থ স্থান অধিকার করে এবং মাষ্টাসে ফাস্ট ক্লাস দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন কোর্সসহ পি.এইচ.ডি  ডিগ্রি অর্জন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনামের সাথে অধ্যাপনা করাকালীন ডাঃ স্বপন কুমার বালা বাংলাদেশ সরকারের ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জ (ডি.এস.ই) এর সিইও  এ্যান্ড এমডি হিসেবে এবং সিকিউরিটি এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বি.এস.ই.সি) এর কমিশনার হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে। বিভিন্ন সেমিনারে পুঁজি বাজার তথা অর্থনৈতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করে প্রশংসা অর্জন করে। 

তিনি ছিল আমার সমাজ এলাকা তথা দেশের র্কীতিমান পুরুষ, নক্ষত্র, সেদিনও এক সাথে সাতপাড় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অনেক সময় কাটালাম। তবে কি যেন এক অব্যক্ত কথা, অব্যক্ত  নির্দেশ বলতে যেও বললো না। অনেক বার চেষ্টা করেছি এলাকা থেকে এই র্কীতিমান লোককে সংবর্ধিত করতে কিন্তু পারিনি এ অপরাধ বোধ আমাকে সকল সময় পিড়া দেয়। তার মাকে বৌদি বলে এবং বাবাকে দাদা বলে ডাকতাম। দুইজনই আমাকে খুব স্নেহ করতো।
কি লিখব অনেক কথাই মনে পড়ে। ভাবতেই পারছিনা আপনি চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। সেই আপনাকে চিতার আগুনে জ্বালাবে যে আগুন সব কিছু ভস্ব করে দেয়। কি করে আপনার নরম দেহ চিতায় আমরা তুলবো হে ভগবান আপনি আমাদের এ কোন কঠিন পরীক্ষায় ফেললেন। কি করে কঠিন পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হব। আমার হৃদয় ভেঙ্গে চৌচির। হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। এই ক্ষত শুকানোর নয়। আপনি স্বর্গের মানুষ ক্ষনিকের জন্য মর্ত্বে এসেছিলেন। রয়ে গেছে আপনার নাম, যশ, খ্যাতি।
আমি যেদিন যাবো মারা, চতুর পাশে হয়ে খাড়া, আমায় তোরা ক্ষমা করে দিস আমার বন্ধুরা, ঈশ্বর বলে মাটি দিতে নিস, আমায় ভগবান বলে মাটি দিতে নিস। 
পাড়া পড়শি নতুন করে দেখিতে আসবে মোরে, মুখের কাপড় খুলিয়া রাখিস, দেখে আমার মুখখানি কারো চোখে এলে পানি, কাঁদিতে বারন করিস।
আমার যাবার পথ ধরে, তোরা আসবি আমার পরে একথা স্মরণে রাখিস
দেখে আমার মুখখানি কারো চোখে এলে পানি কাঁদিতে বারণ করিস।
এখন আর সকাল বেলা উঠে ড্রাইভারকে বলবে না গাড়ী রেডি করো আমি ডিপাটমেন্টে যাবো। মেয়েটি স্কুলে গেলো কিনা, বড় মেয়েটি তার সঠিক সময় অফিসে গেলো কিনা? আর কেউ বলবে না। সবকিছু যেন মুহুর্তের মধ্যে এলোমেলো হয়ে গেলো। একবারও কি ভাবা যায় বাসায় রেখে যাওয়া দুইটি বোন আর বাবা বলে ডাকতে পারবে না। কাকী বিউটির কথা ভাবা যায়, তার কাছে বাকী জীবন অন্ধকার। আর লিখতে পারছি না! তুমি এভাবে চলে যাবে আমাদের সকলকে কাঁদিয়েঃ-
আজ তুমি কাছে নেই, আছো কোন সুদুরে, তোমাকে হারায়ে শুধু, ভাসি আখি নীরে। কান্না ভরা মন মানেনা বারণ, জেগে কাটাই সারারাতি। স্বপন কাকার পরিবারের সকলকে ঈশ্বর যেন এ শোক সয্য করার ক্ষমতা দেন। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। কাকা তুমি পরপারে ভালো থাকো।
কৃপা সিন্ধু বালা
অফিসার ইনচার্জ
ধুনট থানা, বগুড়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *