‘হটাও ঢাকা, চাদরগুলা সরাও’ চেঁচিয়ে চিৎকার করে উঠলেন মিসেস মহুরী। দিনটি ছিল ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর শুক্রবার।

Uncategorized
‘হটাও ঢাকা, চাদরগুলা সরাও’ চেঁচিয়ে চিৎকার করে উঠলেন মিসেস মহুরী। দিনটি ছিল ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর শুক্রবার।
খুব ভোরে সোফায় বসা ছিলেন অধ্যক্ষ মহুরী। প্রত্যুষে কয়েকজন খুনি ঘরে প্রবেশ করে কিছু বুঝে উঠার আগেই গুলি ছুড়ে অধ্যাপক মহুরীর মাথায় গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে নিরাপদে কেটে পড়ে। 

সংবাদটি শহরময় ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ ছুটে যান জামালখানে মহুরীর বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। 
সেদিনকার সময়ে চট্টগ্রামে অবস্থান করার সুবাদে এবং সারা দেশে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর নির্মম নির্যাতনের একটি ডুকুমেন্টারী বই ‘নির্যাতিত সংখ্যালঘু ও বিপন্ন জাতি’ প্রকাশে ছিলাম ব্যস্ত। সংবাদটি পাওয়ার সাথে সাথে ছুটে গেলাম এবং বিক্ষোভে আমিও সামিল হয়েছিলাম। 
দেখতে দেখতে সময় প্রায় বিশ বছর গড়িয়ে গেছে। স্মৃতি থেকে অনেক কিছুই বিস্মৃতিতে হারিয়ে গেছে। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছুটে আসেন। উপস্থিত ছিলেন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অভিভাবক মানবাধিকার কর্মী বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। তিনি আঙ্গুল উচিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে ধিক্কারের সাথে গর্জন দিয়ে উঠলেন এ হত্যাকেও কি আপনি মুরগী চুরির সাথে তুলনা করবেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি চাদর দিয়ে মহুরীর রক্তাক্ত দেহকে ডেকে দিতে চাহিলে তখনই মিসেস মহুরী চেঁচিয়ে উঠেন ‘হটাও ঢাকা, চাদরগুলা সরাও। তিনি চেচিয়ে উঠে বললেন ‘বীভৎস মরদেহ দুনিয়ার লোক দেখুক আর জানুক। কিভাবে চলছে হত্যার মহোৎসব’। তখনই শুরু হয়ে যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে বিক্ষুব্ধ জনতার জুতা নিক্ষেপ।
সেদিন যে বাস্তবতা দেখেছি এবং সত্যের যে মুখোমুখি হয়েছি বিশ বছরপরও তার কোন উন্নতি ঘটেছে বলে মনে হয় না। তাইতো খুনিরা আজও বিরদর্পে ঘুরে বেড়ায়। 

শুধু বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর আত্মার শান্তিলাভ করুক এ কামনা। 
তুষার কান্তি বসাক
১৬.১১.২০২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *