বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দুদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে খুব সোচ্চার। তারা সবসময়ই বলে থাকে যে মুসলমানদের তুলনায় হিন্দুদের জনসংখ্যা কম। তাই হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে আর মুসলমানরা অত্যাচার ও নির্যাতনের সুযোগ পাচ্ছে। আর হিন্দুদের সংখ্যা কম হওয়ার কারনে হিন্দুরা ভীতু হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু আমি বলব যে এসব কিছুই না। পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন, সেখানকার বর্তমান ক্ষমতাসীন তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের হিন্দু সাংসদ রমেশ কুমার ভাঙ্কওয়ানি সেখানকার হিন্দুদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন ও মন্দির ভাংচুরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও সোচ্চার একজন ব্যক্তি। যখনই হিন্দুদের উপর কোন অত্যাচার হয়েছে তখনই তিনি প্রকাশ্যে সোচ্চার হয়েছে। ফেসবুক, টুইটারে প্রতিবাদ জানানো এবং স্থানীয় থানা ও পুলিশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে তাগিদ দিয়েছেন।
এবার আসুন আমাদের বাংলাদেশের দিকে। গত ১৮ সালের নির্বাচনে হিন্দু সাংসদ নির্বাচিত হয়েছে মোট ১৬ জন। তারা প্রত্যেকেই ক্ষমতাসীন অসাম্প্রদায়িক আওয়ামিলীগের লোক ও সাংসদ। এই তিন বছরে যতগুলো হিন্দু নির্যাতন, ঘরবাড়ি ভাংচুর ও ব্যাপক ধ্বংযজ্ঞ হয়েছে তার কোন ঘটনাতে কি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছে ? আমাদের উপর অত্যাচারের বিষয় নিয়ে সংসদে প্রতিবাদ জানানো এবং কোন দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেছেন ????
না, কখনই করেন নি।
১৭ই মার্চ, ২১ তারিখে সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুদের উপর হামলা হল এবং সেখানকার বর্তমান সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। কোন কথাই নেই। পরপর সাতবার ঝুমন দাশ আপনের জামিন নাকচ হল, তবুও সে বোবা হয়ে আছে। তাহলে এরকম হিন্দু সাংসদের কি কোন প্রয়োজন আছে আমাদের? সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মারা গেছে জন্য যে তার আসনে তাঁর স্ত্রীকেই সাংসদ হতে হবে এর কি কোন মানে ছিল, যিনি হিন্দুদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতনের বিষয়ে একেবারেই নীরব।
১৪ সালের নির্বাচনেও ১৬ জন হিন্দু সাংসদ ছিল। তারাও হিন্দুদের উপর অত্যাচারের বিষয়ে একদম নিরব ছিল, কারণ রাতের আঁধারের নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের খাস হিন্দু দালাল।
বাংলাদেশের সংসদে হিন্দু সাংসদের সংখ্যা পাকিস্তানের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি। কিন্তু এদের হাত-পা আওয়ামিলীগের কাছে বাঁধা। তাই এসব অপদার্থ ও মেরুদন্ডহীন হিন্দু নেতা ও সাংসদের কোন প্রয়োজন নেই। এদের দ্বারা হিন্দু সমাজের কখনও কোন উপকার হবে না।
ঠিক এই হিন্দু সাংসদদের মত দেশের অসংখ্য মেরুদন্ডহীন ও অপদার্থ হিন্দু জনগণ রয়েছে যারা স্যেকুলার ও অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে। এরকম নির্বোধ ও মেরুদন্ডহীন হিন্দু জনসংখ্যা দিয়েও দেশের হিন্দু সমাজের কখনও কোন উন্নতি হবে না। বরং উল্টো তাদের অসচেতনতা ও নির্বুদ্ধিতার কারণে তাদের পরিবার ও সমাজের কোন সদস্য লাভ জিহাদ ও মগজ ধোলাইয়ের কারণে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে উল্টো হিন্দুদের শত্রুদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
তাই সংখ্যাধিক্যের চেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন ও হিন্দুত্ববাদী সচেতন ব্যক্তি-ই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি নয়, বরং বর্তমানে বাংলাদেশের যে হিন্দু জনসংখ্যা আছে তার প্রত্যেকটি মানুষকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হোক।
হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য পরিবারে অধিক সংখ্যক সন্তান নিলেন কিন্তু যদি সকল সন্তানের চাহিদা সমানভাবে পূরণ করতে না পারেন, এবং যদি তারা মুসলমানের আর্থিক প্রলোভনে পড়ে ধর্মান্তরিত হয়ে যায় তাহলে হিন্দু সমাজের কল্যাণ তো হবেই না বরং উল্টো শত্রুদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। তাই Quantity নয় Qualityfull হিন্দুত্ববাদী মানুষ চাই।
ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে এবং আওয়ামিলীগের অনুকম্পা ও দয়ায় ১৬ জন হিন্দু সাংসদ নির্বাচিত করার কারণে ওরা প্রতিবাদসহ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না। মূলত ভারতসহ পুরো বিশ্বের নেতৃত্বকে ‘সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার’ দেখানোর জন্য এই ১৬ জন হিন্দু সাংসদকে ক্ষমতায় বসিয়ে হাতের পুতুল বানিয়ে রেখেছে আওয়ামিলীগ। তাই সকল হিন্দুদের একটাই দাবি হওয়া উচিত হিন্দু ও সকল সংখ্যালঘুদের জন্য জনসংখ্যার ভিত্তিতে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করা। সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে যদি হিন্দু সাংসদরা জাতীয় সংসদে যাওয়া ও কথা বলার সুযোগ পেত তাহলে দেখতেন হিন্দু নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনায় সাংসদরাই নেতৃত্বের সামনে থেকে রাজপথ অচল করে দিতে পারত। তাই হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসনের দাবিতে আন্দোলন করা উচিত এবং আসন্ন ২০২৩ সালের নির্বাচনে একটি হিন্দুও যেন ভোট দিতে না যায় সে ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা করা উচিত।
মোহন সরকার, রংপুর
২১শে আগষ্ট ২০২১