হিন্দুধর্মের মূল শাস্ত্রগ্রন্থ কি? তার বিষয়বস্তুর সারাংশ দেওয়া কি সম্ভব? 

Blog ধর্ম

হিন্দুধর্মের মূল শাস্ত্রগ্রন্থ কি? তার বিষয়বস্তুর সারাংশ দেওয়া কি সম্ভব? 

হিন্দুধর্মের মূল শাস্ত্রগ্রন্থ বেদ। ‘বেদ’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ জ্ঞান। বেদের অন্যান্য প্রচলিত নাম—শ্রুতি (যা ব্যক্ত হয়েছে), আগম (যা ঐতিহ্যরূপে আমাদের কাছে এসেছে) ও নিগম (যা জীবনের মূল। সমস্যাগুলাের স্পষ্ট ও নিশ্চিত সমাধান নির্দেশ করে)। পরমেশ্বরের করুণায় বেদ ঋষিদের স্বজ্ঞার গভীরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্ভাসিত। হয়েছিল, তাই বেদকে বলা হয় অপৌরুষেয়’ অর্থাৎ এমন কিছু যা মনুষ্যরচিত নয়।

এই বেদের সংখ্যা চার। এগুলাে হলাে : ঋগ্‌বেদ, যজুবেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদ। 

এদের মধ্যে ঋগবেদ প্রাচীনতমরূপে স্বীকৃত। বস্তুতঃ বালগঙ্গাধর তিলক প্রমুখ কয়েকজন মন ঋগবেদেরই মধ্যে প্রাপ্ত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে নির্ণয় করেছেন যে, এটি কমপক্ষে ৮০০০ বছর আগে সঙ্কলিত।

ঋগবেদ প্রধানতঃ ঋক্ বা প্রার্থনা মন্ত্রের সংগ্রহ। যজুর্বেদের মুখ্য আলােচ্য-যজ্ঞ সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান। আর সামবেদে ঋগবেদের কিছু বাছাই করা সূক্তে সুর আরােপ করে কয়েকটি যজ্ঞের বিশেষ বিশেষ পর্যায়ে সেগুলাে উদ্গীত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আদি উৎস সামবেদের মধ্যেই নিহিত)। অথর্ববেদ হলাে প্রধানতঃ নীতিতত্ত্ব এবং তার সঙ্গে আয়ুর্বেদ প্রভৃতি (আয়ুর্বেদ অর্থাৎ স্বাস্থ্য ও আয়ুসম্বন্ধীয় বিজ্ঞান) বিজ্ঞানের কিছু কিছু বিভাগের একত্র সঙ্কলন।

পরম্পরা অনুসারে চার বেদের প্রত্যেকটি আবার চারটি অংশে বিভক্ত—মন্ত্র বা সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ্‌। সংহিতাগুলাে ইন্দ্র, বরুণ, বিষ্ণু প্রভৃতি বিভিন্ন বৈদিক দেবতার উদ্দেশ্যে রচিত প্রার্থনামন্ত্রের সংগ্রহ। ব্রাহ্মণসমূহে রয়েছে বৈদিক যাগযজ্ঞের প্রকরণ পদ্ধতির বিবরণ (এই ব্রাহ্মণ’ শব্দটির সঙ্গে ব্রাহ্মণ জাতির কোন সম্পর্ক নেই)। আরণ্যকের মধ্যে আছে অরণ্যে অনুষ্ঠিতব্য যজ্ঞভিত্তিক বিভিন্ন ধ্যানের বর্ণনা। উপনিষদ্‌গুলাে হলাে দার্শনিক নিবন্ধ; এদের উপজীব্য বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অন্তরালবর্তী সত্যবস্তু, মানুষের প্রকৃত স্বরূপ, জীবনের উদ্দেশ্য ও সেই উদ্দেশ্যসাধনের উপায়’ প্রভৃতি বিষয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *