১। হিন্দুধর্ম কি?
প্রাচীন পারসিকদের ভাষায় স’ অক্ষর বিকৃত হয়ে ‘হ’ রূপে উচ্চারিত হতাে। তাই তারা সিন্ধুনদের এই দেশকে বলত হিন্দুস্থান বা হিন্দুদেশ, এখানকার লােকদের বলত হিন্দু আর তাদের ধর্মকে বলত হিন্দুধর্ম। সেদিক থেকে দেখলে, ভারতে উদ্ভূত সমস্ত ধর্মই—তা সে জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম বা শিখ ধর্ম যা-ই হােক না কেন—এক হিন্দুধর্মেরই বিভিন্ন রূপ হয়ে দাঁড়ায়।
তবে সাধারণতঃ, বেদের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং আর্যজাতির দ্বারা। আচরিত ধর্মকেই হিন্দুধর্মের সংজ্ঞা ধরা হয়। হিন্দু ঐতিহ্যে অবশ্য এই ধর্মকে আরও যথাযথভাবে বলা হয় সনাতন ধর্ম’ অর্থাৎ যে ধর্ম সুপ্রাচীন ও শাশ্বত মূল্যবােধের ধারক (সনাতন=প্রাচীন ও শাশ্বত)। ধর্ম শব্দের অর্থ যা বিশ্বকে ধারণ করে’ (ধৃ=ধারণ করা)। চূড়ান্ত বিচারে ধর্ম বলতে স্বয়ং ঈশ্বরকেই বােঝায়। তবে গৌণ অর্থে মানুষকে ঈশ্বরােপলব্ধির দ্বারে পৌছে দেয় অধ্যাত্ম সাধনার এমন যে কোন পথকেই ‘ধর্ম’ বলা যেতে পারে। অতি প্রাচীনকাল থেকে আরম্ভ করে আধুনিককাল পর্যন্ত, হিন্দুধর্মে নির্দেশিত অধ্যাত্মসাধনার বিভিন্ন পথ আন্তরিক নিষ্ঠাবান সাধককে ঈশ্বরােপলব্ধিতে উপনীত করে আসছে, ভবিষ্যতেও যে করবে তা সুনিশ্চিত। সেদিক থেকে ‘সনাতন। ধর্ম’ নামটি খুবই সুপ্রযুক্ত।

২। কে এই ধর্মের প্রবর্তন করেন এবং কবে?
পথিবীর অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে হিন্দুধর্মের প্রভেদ এখানে যে, কোন বিশেষ ঈশ্বরাদিষ্ট ব্যক্তি এর প্রবর্তক নন বা মানবেতিহাসের কাল প্রবাহে কোন বিশেষ লগ্নে এর উদ্ভব হয়নি। এই ধর্ম দাঁড়িয়ে আছে এমন অগণিত সাধু, সন্ত ও ঋষির অতিচেতন অনুভূতি ও আধ্যাত্মিক উপলব্ধির উপর, যাদের প্রত্যেকেই ঈশ্বরাদেশপ্রাপ্তরূপে পরিগণিত হবার যােগ্য—এ হলাে হিন্দুধর্মের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। হিন্দুধর্মের সুদৃঢ় ভিত্তিস্বরূপ এই আধ্যাত্মিক অনুভূতিসমূহ আমরা যাচাই করে। নিতে পারি। গঙ্গানদীর মতাে সহস্র সহস্র বৎসর ধরে এর ঐতিহ্যের ধারা প্রবহমান। সেই কারণেই এই ধর্মের নাম দেওয়া হয়েছে। সনাতন ধর্ম।