হিন্দুর জমি -সমগ্র পৃথিবীতে এর চেয়ে সস্তা, টেঁকসই আর লাভজনক লগ্নি আর কিছু নেই।

অনিমিত্র চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গ ভারত

হিন্দুর জমি -সমগ্র পৃথিবীতে এর চেয়ে সস্তা, টেঁকসই আর লাভজনক লগ্নি আর কিছু নেই। হাসিলও করা যায় অনায়াসে – শতধা বিভক্ত হিন্দু জাতি কিছুটা মিনমিন করবে আর বিরোধীপক্ষ – যে কেউই হোক – কখনো হিন্দু উচ্চ বর্ণকে, কখনো বা হিন্দু নিম্ন বর্ণকে বশ করে কাজ হাসিল করবে। যাঁরা জানেন শুধু পশ্চিমবঙ্গেই একমাত্র ভূমি সংস্কার হয়েছে, তাঁদের পক্ষে অবশ্যই জানা প্রয়োজন যে ভূমি সংস্কার পূর্ব পাকিস্তান এবং কাশ্মীরে হয়েছে। এবং তিনটিতেই কম্যুনিস্টদের অংশগ্রহণ রয়েছে এবং তিন স্থানেই একমাত্র হিন্দুর জমির ওপরেই ভূমি সংস্কার হয়েছে। সংস্কার হল হিন্দুর ভূমির আর তার সাথেই ঘনিয়ে এলো হিন্দুর সর্বনাশ – তিন স্থানেই। কেরালা রাজ্যেও ভূমি সংস্কার হয়েছে এবং সেখানেও সেই এক ও অকৃত্রিম হিন্দুর জমি। কেরালা রাজ্যে হিন্দুদের বর্তমান অবস্থা নিশ্চয়ই আর সবিস্তারে বর্ণনা করতে হবেনা।

পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে বাঙ্গালী হিন্দুর অবস্থা শোচনীয়।  অস্তিত্বজনিত সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভারতবর্ষে আশ্রয় নেওয়া হিন্দুদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সংসদে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) এবং সেই আইন অর্থাৎ হিন্দুর স্বার্থের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলির ও তাদের বুদ্ধিজীবী, সমর্থকদের অবস্থান নতুন কিছু নয়। তা চলছেই। কেন চলছে? কারণ পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা কোন সক্রিয় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি – এই সরল সত্যটি দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। যদি আপনি, আমি সবাই মিলে এটি করতাম তাহলে রাজনৈতিক গতি অন্যদিকে প্রবাহিত হতো। কিন্তু সমস্যা শুধু এখানেই থেমে নেই। বাংলাদেশে যেমন হিন্দুর দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে নয়ছয় করার প্রবণতা সর্বোত্তম, পশ্চিমবঙ্গেও তার সংক্রমণ বাড়ছে।  এবং তাতে কোন সেক্যুলার পার্টি ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন পিছিয়ে নেই। হিন্দুর জমির দিকে সকলের চোখ কারণ পাল্টা চোখ রাঙায় না হিন্দু সমাজ। অবশ্য ব্যতিক্রমও হচ্ছে।

ব্যতিক্রম – গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগণা – এক সহায়সম্বলহীন বৃদ্ধার অন্তিম ইচ্ছাকে ভুলুন্ঠিত করে হিন্দুর জমি নিয়ে নয়ছয় করার খেলা শুরু হয়েছে, যা বিনা বাধায়, বিনা প্রতিরোধে পশ্চিমবঙ্গের অন্যত্রও চলছে বহাল তবিয়তে। সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, আজ থেকে ২০ বছর আগে উত্তরাধিকারহীনা এক বৃদ্ধা তার সম্পত্তি জমি স্থানীয় মানুষ জন দের উপস্থিতিতে পঞ্চায়েত কে দানপত্র করে দিয়ে যান। তাঁর অন্তিম ইচ্ছা ছিল ওঁর মৃত্যুর পরে ঐ জমিতে একটি ছোট্ট মন্দির তৈরী হোক এবং প্রশাসনের তত্বাবধানে একটি কারিগরী/মেয়েদের বিদ্যালয় গড়ে উঠুক। বিশেষত,
ঐ দানপত্র করা জমির ১০০ মিটারের মধ্যেই ভারত সেবাশ্রমের ও বিবেকানন্দ মঠের অফিস। বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে অনেক দিন।

পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় বর্তমানে রাজ্যের শাসক দল অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস। এবং অনেক দিন ধরেই ঐ জমিতে বড়ো বিল্ডিং তৈরী হচ্ছিল। স্থানীয় অঞ্চলে বলা হয়েছিল পঞ্চায়েতের তরফে যে ওই জমিতে একটি কারিগরী স্কুল তৈরী হচ্ছে কিত্নু গতকাল রাতে জানা গেল যে সেটি সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা বোর্ডের জন্য নিয়োজিত একমাত্র। হিন্দুদের বিক্ষোভে এই মুহূর্তে গোবরডাঙ্গা রণক্ষেত্র। বিক্ষোভ আয়ত্তে আনতে পুলিশ লাঠিই চালায় যা সামগ্রিক পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তোলে। প্রতিবাদ চলছে এখনো – আজ যদি প্রতিবাদ না করে হিন্দুরা, এই ঘৃণ্য চক্রান্ত পরাস্ত না করে তাহলে কাল কোন জায়গা থাকবেনা বাঁচার। মনে রাখবেন হিন্দু এই মুহূর্তে সপ্তরথীবেষ্টিত অভিমন্যুর মতো – কিন্তু এই সর্বনাশা চক্রব্যূহ ভেদ করে বিজয়ী হতে হবে আমাদেরই।

অর্জুনস্য প্রতিজ্ঞা – ন দৈন্যম, ন পলায়নম।

লেখক: অনিমিত্র চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *