মৃত শান্ত চক্রবর্তীর একমাত্র ছেলে কলেজছাত্র স্বরূপ চক্রবর্তী সোহম বলেন- দীর্ঘদিন ধরে তার বাবা জামালপুর শহরের রেলগেইট এলাকার লিলি মোটরস-এ ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। প্রায় ছয় মাস আগে ওই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি শেরপুরেই থাকতেন। তিনি অভিযোগ করেন- ‘মরদেহ শনাক্তের জন্য অপেক্ষা না করে বা মরদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করে বেওয়ারিশ হিসেবে দ্রুত দাফন করা হলো কেন? তার প্রশ্ন- আইনে আছে-অজ্ঞাত অথবা দুর্ঘটনায় মারা গেলে মরদেহ পুলিশ সুরত হাল করবে। তারপর ময়নাতদন্ত হবে। শুধু তাই নয়- শান্ত চক্রবর্তী একজন ব্রাহ্মণ। তার গলায় পৈতে আছে এবং তার খৎনা করানোও ছিল না। পুলিশ, চিকিৎসক, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের একজন সদস্যের চোখেও কি এসব কিছু ধরা পড়েনি? দাফন-কাফনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা গোসলের সময় অবশ্যই তা দেখার কথা। কিভাবে তাহলে তাকে দাফন করা হলো?’ বাবার মৃত্যুকে রহস্যজনক মৃত্যু বলে তিনি ঘটনার অধিকতর তদন্ত দাবি করেন এবং রেলওয়ে পুলিশের আচরণও রহস্যজনক বলে উল্লেখ করেন।
শান্ত’র ছোট ভাই রাজু ও রতন চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, ‘জিআরপি পুলিশ দাবি করছে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কায় শান্ত দা মাথায় আঘাত পেয়ে মারা গেছেন। কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি- স্থানীয়রা এ ধরনের কোনো ঘটনা সেদিন লক্ষ্য করেননি।’
এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কানু চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘মরদেহ শনাক্তের পর রেলওয়ে পুলিশ মৃত পরিবারের সদস্যদের কোনো রকম সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। চারদিন ঘুরে অনেক কষ্টে প্রিয় স্বজনের গলিত দেহ পেলেন তারা। এটি খুবই দুঃখজনক।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক বছর আগে রেললাইনের পাশে পাওয়া তরুণ সাংবাদিক ফাগুন রেজার লাশের ক্ষেত্রেও রেলওয়ে পুলিশ তাড়াহুড়ো করে দাফনের ব্যবস্থা করেছিল। বিষয়গুলো গভীর তদন্তের দাবি রাখে।’
এ ব্যাপারে জামালপুর রেলওয়ে পুলিশের এসআই সোহেল রানা বলেন, ‘রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মৃত্যুর পর শনাক্তকারী না পাওয়ায় মুসলিম ভেবে দাফনের জন্য আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।’
এ ব্যাপারে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবু সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির ছেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুর রহমান উপস্থিত থেকে মরদেহ উত্তোলন করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।’