হিন্দু চরিত্রের সবথেকে বড় দুর্বলতা হল ক্ষমা এবং অতিরিক্ত সহনশীলতা ।

Uncategorized

হিন্দু চরিত্রের  সবথেকে বড় দুর্বলতা হল ক্ষমা এবং অতিরিক্ত সহনশীলতা ।  ঘোরতর শত্রুকে আপন করতে গিয়ে বীর যোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও হিন্দুদের  অনেক সময় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে এই বোকামির জন্য । বেইমানি আর বিশ্বাসঘাতকতা  মুসলমানদের রক্তে । এই কারণে সমগ্র মুসলিম যুগের ইতিহাস হল চরম অশান্তি আর রক্তের ইতিহাস ।

সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি  শেষ বয়সে উম্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন ।  পিতার সমান কাকা জালালুদ্দিন খিলজীকে হত্যা  থেকে শুরু করে  বিজিত  হিন্দু  রাজাদের স্ত্রী এবং কন্যাকে হারেমে পোডা, অজস্র পাপ করেছিলেন জীবনে । কামুক এই  সুলতানকে  শেষ বয়সে শুনতে হয়েছিল যে কামের তাড়নায়  তিনি নাকি  নিজের কন্যার সঙ্গে সঙ্গম করেছিলেন ।  এই আঘাত আলাউদ্দিন খিলজি নিতে পারেননি ।  পাগল হয়ে গিয়েছিলেন ।  শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প ‘  শঙ্খ কঙ্কন ‘   এই পটভূমিকতেই লেখা ।  সুলতান অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর সমগ্র ক্ষমতা বর্তায় মালিক কাফুরের হাতে ।  অসুস্থ  উন্মাদ সুলতানকে  মালিক কাফুর  নির্দেশে  একসময় নিয়মিতভাবে খাবার এবং পানীয় জল দেওয়া  বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল । শরীরময় ঘা আর পোকা নিয়ে দৌডে বেরিয়েছিলেন সুলতান শেষ কয়েক বছর ।

বন্দী শাহজাহানকে একেবারে সাধারণ বন্দির পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিলেন ঔরঙ্গজেব ।  শাহাজাহান যমুনার জল খেতে পছন্দ করতেন ।  ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে তা বন্ধ হয় । শাহজাহানকে বাধ্য করা হয়েছিল  গ্রীষ্মের দুপুরে প্রাসাদের মধ্যে থাকা কুয়োর লালচে জল খেতে । শাহজাহান  চোখের জলে ঔরঙ্গজেবকে লিখছেন —

‘  Praised  be the Hindus in all cases
    As they ever offer water to their dead
    And thou,  my son, art a marvellous mussalman
As thou causest me in life to lament for water ‘

ঔরঙ্গজেবকে  যিনি কোলে পিঠে মানুষ করেছিলেন ,ঘোড়ায় চড়া , অস্ত্রশিক্ষা  প্রায় সবকিছুই  নিজের হাতে করেছিলেন  সেই পিতার সমান জেব মহাম্মদকেও ছাড়েননি ঔরঙ্গজেব ।  দারা হত্যার বিরোধিতা করার জন্য  জেব  মহাম্মদকে  কোতল করেছিলেন  ঔরঙ্গজেব ।

সেই ঔরঙ্গজেবেরও শেষ জীবন ছিল ভয়ংকর ।  ঔরঙ্গজেব এর দাক্ষিণাত্য নীতি, রাজপুত নীতি,  সবটাই ছিল ভুলে ভরা ।  সারা জীবন ধরে তিনি অজস্র শত্রু তৈরি করে গিয়েছিলেন ।  মোগল সাম্রাজ্য ধ্বংসের  উনিই প্রধান কারণ । ওনাকে দেখে যেতে হয়েছে ছেলেদের মধ্যে  মারাত্মক দ্বন্ধ ।  শেষ তিন মাস ঔরঙ্গজেব জল খেতে পারতেন না ।  উনি প্রাসাদের চারিদিকে জেব মহম্মদের  ছায়ামূর্তি দেখতে পেতেন ।  ঔরঙ্গজেব এর ছেলে আজম  লিপিবদ্ধ  করে গিয়েছিলেন  বাবার এই মানসিক বিকার ।  আজম লিখছেন , ”  বৃদ্ধ সম্রাট  সন্ধ্যে  নেমে এলেই  ভয়ে কুঁকড়ে যেতেন ।  উনি  চারদিকে  জেব মহাম্মদের ছায়ামূর্তি দেখতে পেতেন ।  মৃত্যুর শেষ কয়েক বছর আগে থেকে  ভালো করে ঘুমোতেই পারেননি  সম্রাট । বিবেকের দংশনায়  কাতর ঔরঙ্গজেব  ছেলে আজমকে লিখছেন , ” I came alone and am going alone . I have not done well to the country and the people ,  and of the future there is no hope . ” অন্য ছেলে কাম বক্সকে  ঔরঙ্গজেব লিখছেন , ‘  I carry away  the burden of my short-comings…….Come what may ,  I am launching my boat.”

মুসলিমদের বিরুদ্ধে  যুদ্ধে হিন্দুদের মধ্যে সফল  যোদ্ধাদের মধ্যে দুজন বীরের নাম রানা বাপ্পাদিত্য রাওয়াল আর রানা হাম্বীর । এনারা দুজনেই  মুসলিমদের বেইমানি আর বিশ্বাসঘাতকতার অস্ত্র ফিরিয়ে দিতেন একইভাবে  বরংচ আরও ভয়ঙ্করতার সঙ্গে । 738  খ্রীস্টাব্দের বিখ্যাত রাজস্থান যুদ্ধের প্রাক্কালে  গুর্জর প্রতিহার রাজ নাগভট্টকে মেবারের রানা বাপ্পাদিত্য রাওয়াল চিঠিতে লিখেছেন , ” যাদের যুদ্ধে জেতার অস্ত্র বেইমানি আর বিশ্বাসঘাতকতা , যারা যুদ্ধের ন্যায়-নীতি মানে না । তাদের সঙ্গে ন্যায় নীতি ভদ্রতা মেনে লড়াই করার কোন প্রশ্নই নেই । শত্রুর সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে হবে  যাতে তারা ইহ জন্মে যেন এ দেশ আক্রমণ করার সাহস না পায় । ” বস্তুতপক্ষে রাজস্থান যুদ্ধে হিন্দুরা এমন ত্রাস , এমন ভয়ংকরতার সৃষ্টি করেছিল যে পরের 250 বছর  আরবরা আর ভারত আক্রমণের  সাহস দেখায়নি ।

শুধু যুদ্ধক্ষেত্র নয় , ব্যক্তিজীবনেও কথাটা ঠিক ।  বেইমানীর কোন ক্ষমা নেই । যতবার ক্ষমা করবেন তারপরেই সে আবার ছুরি মারবে ।  একদম নিজের জীবনের উপলব্ধি । অপাত্রে ক্ষমা প্রদর্শন আদতে আপনারই জীবন সংশয় করবে ।

তথ্যসূত্র : 1) An Advanced History Of India : R .C.Majumdar
2) History Of Rajasthan : Rima Hooja

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *