হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র পরামর্শ দিয়েছিলেন

Uncategorized

“শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তখন সবেমাত্র হিন্দুমহাসভা গঠন করেছেন । শ্রীযুক্ত এন. সি. চ্যাটার্জী এবং অন্যান্য কর্মীগণ নিয়ে তিনি এলেন আশ্রমে শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে । তাঁর ইচ্ছা সৎসঙ্গ যদি হিন্দু মহাসভার সঙ্গে যোগ দেয় তবে দুয়ে মিলে একটা বিরাট শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে।
সব শুনে, ঠাকুর বললেন, ” হিন্দু বলতে কি বুঝবো তার সংজ্ঞা সর্বপ্রথমে সুস্পষ্ট হওয়া আবশ্যক। কোন আচরণই করব না অথচ মুখে বলব আমরা হিন্দু তা হয় না। অনুষ্ঠেয় আচরণ না থাকলে, ধর্মের বন্ধন না থাকলে কোন প্রতিষ্ঠানই শক্তিশালী হয় না।”

“আর দেখুন, যদি সত্যিই হিন্দুর কিছু কল্যাণ করতে চান তবে বাংলায় যে সব জায়গায় হিন্দু সংখ্যালঘু, সেই সব জায়গায় সংখ্যাগুরু স্থান থেকে লোক এনে বসান। যদি তা করতে পারেন তবে পরে বুঝবেন হিন্দুর যথার্থ কল্যাণ কিছু করলেন।”

“নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে কেউ কি আসতে চাইবে?” শ্যামাপ্রসাদ বাবু জিজ্ঞেস করলেন।
শ্যামাপ্রসাদ বাবু কি একটু ভেবে নিলেন, বললেন, “আমি আবার এসে এ বিষয়ে আলোচনা করব।”

ঠাকুর সহজ বাংলা রকমে বললেন, “অমন গদাইলস্করী চালে চললে কিন্তু চলবে না। যদি sincere হন তবে immediately লাগা লাগে।”
ঠাকুরের দূরদৃষ্টি যে কি নির্ভুল তা যারা তাঁর সান্নিধ্যে এসেছে তারাই মর্মে মর্মে জানে। কথাচ্ছলে ঠাকুর প্রায়ই বলেন, ” আমি আপনাদের যা করতে বলি তা’ যদি ঠিকঠিক মত করতে পারেন তবে তার সুফল যে কতখানি তাও দশ-বছর পরে বুঝতে পারবেন।”

“আপনাদের বুদ্ধি আছে, আপনারা বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে সিদ্ধান্তে উপনীত হন। আমি পরমপিতার অবোধ সন্তান। তিনি আমাকে দিয়ে যা’ দয়া করে বলে দেন তাই আমি আপনাদের বলি। এতে বুদ্ধি বিচারের স্থান নাই । যা’ দেখি তাই বলি‌।”

এই কি সেই দুর্লভ অন্তর প্রত্যাদেশ — যা একমাত্র শুদ্ধ নিষ্পাপী পবিত্র অন্তরে স্বতঃ উৎসারিত হয়ে ওঠে ?

কে জানত সেদিন এই সংখ্যালঘুত্বের জন্যই বাংলা দ্বি-খন্ডিত হয়ে যাবে ? হিন্দু-মুসলমান উভয়ের জীবনযাত্রা হবে বিপর্য্যস্ত এবং বিশৃঙ্খল ? হিন্দু শাসকের অধীনে মুসলমান থেকেছে, মুসলমান শাসকের অধীনে হিন্দু। কিন্তু সেদিন তারা ছিল নির্ভয়, নিঃশঙ্ক, এক মায়ের বুকে দুটি সন্তান। কিন্তু যেদিন থেকে উভয় সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রাই হয়েছে শঙ্কিত, বিপন্ন ; কেউ কাউকে আর প্রাণের থেকে বিশ্বাস করতে পারছে না, সেদিন যদি ভারতের অন্য প্রদেশের হিন্দু সংখ্যাগুরু এসে হিন্দুসংখ্যাকে বলবান করতো তবে ভারত ইতিহাসের রূপ যে অন্যরকম হত একথা আজ আর কারও অজানা নেই।

সংখ্যাগুরুর ভিত্তিতে দেশবিভাগ আন্দোলন প্রতিরোধ-কল্পে শ্রীশ্রীঠাকুরের আপ্রাণ প্রচেষ্টা সম্বন্ধে সংঘভ্রাতা কালিদাস মজুমদার মহাশয় যাহা বলিয়াছেন, এই প্রসঙ্গে তাহা একটু উল্লেখ করিতেছি । তিনি লিখিয়াছেন :

“কতকাল পূর্বে শ্রীশ্রীঠাকুরের দূরদৃষ্টিতে ভারতবিভাজন-রূপ মহা অনর্থটি ধরা পড়িয়াছিল, আর তাহা নিবারণের জন্য তিনি বাস্তবভাবে কী চেষ্টাই না করিয়াছিলেন ! তৎসম্বন্ধে সামান্য একটু পরিচয় দিতেছি । ১৯৪২ সনে এপ্রিলের অধিবেশনে আগত কর্মীগণের নিকট শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁহার এই বিশেষ জরুরী অভিমত ব্যক্ত করিলেন যে, অন্ততঃ ৩৫০ জন ব্যক্তির প্রত্যেকে যাহাতে ৩০০ টাকা করিয়া তাঁহার হস্তে অর্পণ করেন, অগৌণে তাহার ব্যবস্থা করিতে হইবে। শ্রীশ্রীঠাকুরের উদ্দেশ্য বোঝা খুবই কঠিন । কিজন্য কখন তিনি কি করিতে বলেন তাহা আমাদের দৃষ্টি ও বোধ-শক্তির অতীত। কর্মীগণ সকলেই চিন্তা করিতে লাগিলেন, শ্রীশ্রীঠাকুরের এই বিশেষ আদেশ প্রদানের কারণ কি ? ইহা যে অবশ্যই কোন মঙ্গলের জন্য, তাহা তো বলাই বাহুল্য । তবুও তাঁহার উদ্দেশ্য একটু স্পষ্টভাবে জানিবার জন্য আমরা সবাই তাঁহার নিকট আবেদন জানাইলাম । তিনি বলিলেন — “অন্ততঃ তিনশত হিন্দু কৃষক পরিবার আমদানী করে, আশ্রম ও পাবনা শহরের আশেপাশে যেসব পতিত জমি পড়ে আছে তা যত পারা যায় খরিদ করতে হবে, আর এই কৃষকদের দিয়ে পতিত জমিগুলির আবাদ করিয়ে ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে । এই সব কাজের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে ।” বহু পরে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে বুঝিতে পারিয়াছিলাম যে, সাম্প্রদায়িকতার বিষ জ্বালা হইতে হিন্দু-মুসলমান উভয়কেই রক্ষা করিবার জন্যই শ্রীশ্রীঠাকুরের এই আয়োজন। তিনি দিব্য দৃষ্টিতে দেখিয়াছিলেন যে, অবস্থা বিপর্যয়ে ভারতবিভাগ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়িবে। তাই এই বিষয়ে বিশিষ্ট নেতাদেরও তিনি বহু পূর্ব হইতেই সজাগ করিয়া তুলিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন । ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জ্জী, মিঃ এন. সি. চ্যাটার্জী প্রমুখ নেতাদের সহিত এবিষয়ে সবিস্তারে আলাপ আলোচনা করিয়া তিনি বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন যে হিন্দুমুসলমানের দ্বন্দ্বের ফলে দেশের সম্মুখে যে বিপদ ঘণীভূত হইয়া আসিতেছে তাহাতে না হবে মুসলমানের না হবে হিন্দুর কল্যাণ। তিনি চাহিয়াছিলেন ভারত-জননীর বুকে তাহার উভয় সন্তান হিন্দুমুসলমান সকলেই যেন পবিত্র ভ্রাতৃ-বন্ধনে আবদ্ধ হইয়া পরস্পরে মিলিয়া মিশিয়া পরম শান্তিতে বাস করিতে পারে। — মায়ের সন্তানগণ যেন কখনো বিচ্ছিন্ন না হয়। এই মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তিনি নেতাদের উপদেশ দিয়াছিলেন যে বাংলার বাহিরের হিন্দুগরিষ্ঠ স্থান হইতে হিন্দুদের আনিয়া মুসলমানগরিষ্ঠ অঞ্চলে বসতি করাইতে হইবে। এই অবস্থা কার্য্যে পরিণত করিতে যে সব বাস্তব সমস্যার উদ্ভব হওয়া সম্ভব তৎসমুদায়েরও সমাধানের জন্য তিনি তাহাদিগকে যথাপ্রয়োজনীয় যুক্তি বুদ্ধি প্রদান করিয়াছিলেন। দুঃখের বিষয় নেতাগণ, এবিষয়ে ঔদাসীন্য প্রদর্শন করিলেন । কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর তাহাতে নিরস্ত হইলেন না। এই অবস্থায় অন্ততঃ তাঁহার নিজের জন্মভুমি পাবনা অঞ্চলটিকে কিভাবে ভাবী বিপদের হাত হইতে রক্ষা করিতে পারেন, সেজন্য তিনি মহা ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। উদ্দেশ্যসাধনেরর জন্য তদঞ্চলের হিন্দু-মুসলমান জনসংখ্যার সমতা রক্ষার্থে তিনি বিভিন্ন স্থান হইতে প্রায় তিনশত হিন্দুকৃষক পরিবার সংগ্রহ করিয়া আনিয়া তথায় বসতি স্থাপন করাইলেন, বহু পতিত জমি খরিদ করিয়া লইলেন, কৃষকদিগকে বলদ, লাঙ্গল, বীজশস্য, বস্ত্র ও খাদ্য যোগাড় করিয়া দিলেন, কত ঘর বাড়ী প্রস্তুত করিয়া দিলেন। চতুর্দিকে যেন বসন্তসমাগমে জীবনের নবীন স্পন্দনে সঞ্জীবিত হইয়া উঠিল।

আর একটি কথা। ভারত বিভক্ত হইবার বহু পূর্বে, খুব সম্ভবত ১৯৪২/৪৩ সনের সাধারণ নির্বাচন কালে, হিন্দুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলিয়াছিলেন, — হিন্দু, তুমি যদি সংহত না হও তাহলে ভবিষ্যতে তোমাকে আত্মরক্ষার জন্য স্বীয় জন্মভুমি ছাড়তে হবে । নয়ত রক্ত স্রোতে মাতৃভুমি প্লাবিত হবে। আর ইহাতে হিন্দু-মুসলমান উভয়েই অনন্ত দুঃখ সাগরে নিমজ্জিত হবে।

ভাবী অমঙ্গলকে নিরাকরণ করতঃ তাঁহার শুভ সংকল্পে বাস্তবে রূপায়িত করিবার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুর তখন কি প্রাণান্ত শ্রম করিয়াছিলেন, স্বচক্ষে দেখিয়াছি, ভাষায় তাহা বর্ণনা করা আমার সাধ্যাতীত। তাঁর দূরদৃষ্টির জ্বলজ্যান্ত আরেকটা নজির মনে পড়ে।

বাংলা তেরশ আটচল্লিশ সাল। আশ্রমে ঋত্বিক অধিবেশন চলছে। অধিবেশনে কর্মীগণ দ্বারাই সাধারণতঃ পরিচালিত হয়। প্রকাশ্য অধিবেশনে তিনি যোগ দেন না কখনো। কিন্তু সেবার এলেন। তাঁর মুখ চোখমুখের চাউনি ভিন্নরকমের। যেন কোন একটা ভয়াবহ পরিণতি প্রত্যক্ষ করে চঞ্চল ও অধীর হয়ে উঠেছেন তিনি। কর্মীগণকে উত্তেজিত কন্ঠে বলতে লাগলেন — ” সবাইকে ডেকে ভাল করে বলে দিন, এমনদিন সামনে আসছে যখন একমুষ্টি টাকার বিনিময়েও একমুষ্টি অন্ন মিলিবে না। যার কাছে যে টাকা মজুত আছে , যার যা সোনার গয়না আছে, তা দিয়ে জমি সংগ্রহ করুক , চাষের ব্যবস্থা করুক, ধান মজুত করুক। ভীষণ দূর্দিন অদূরে অপেক্ষা করছে। কর্মীগণ প্রত্যেকটি কেন্দ্রে যেয়ে সবাইকে ডেকে যেন এই কথা বলে দেয়। যারা আমার কথায় আস্থা রাখে তা’রা কেউ যেন কালবিলম্ব না করে।”
এ নির্দেশ যখন এল, তখন চালের মণ বোধ হয় দশ টাকার উর্দ্ধে ওঠেনি। তখন শুনে কেউ ভেবেছে, এ মনে হয় ঠাকুরের অতিসাবধানতা, কেউ ভেবেছে তাঁর অতিশয়োক্তি। কিন্তু দু’বছর বাদে পঞ্চাশ সালে এলো মন্বন্তর — ভীষণ আকার নিয়ে মহামন্বন্তর — তখন তাঁর উক্তির গুরুত্ব দেশবাসী উপলব্ধি করলো — আর তা শুধু হাড়ে হাড়ে নয়, মজ্জায় মজ্জায় ।
কিন্তু তাই বলে তিনি যে সবসময় সব-কিছুর ভবিষ্য-বাণী করে তাঁর অনুরাগীদের জীবনযাত্রা করে দিচ্ছেন সহজ, সংগ্রাম-বিমুখ এবং নিশ্চিন্ত তা কিন্তু মোটেই নয়।” ……..

( ঠাকুর ব্যাথাতুর হৃদয়ে বলেছেন ) ‘‘চেষ্টা করেছিলাম প্রাণপণ যাতে হিমাইতপুর না ছাড়তে হয়, কিন্তু অত্যাচারিত হলাম ভীষণ, পারলাম না কিছুতেই। বাড়ী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল, মানুষ খুন করে ফেল্ল। ওখানকার সব লোকের বিরুদ্ধতার জন্য পারলাম না। সকলের ভাল করতে গিয়ে আমি একেবারে জাহান্নামে গেলাম।’’

(ঠাকুর আক্ষেপ করে বলেছেন) , ‘‘আমরা হিন্দুরাই পাকিস্তানের স্রষ্টা। আমরা আরো চেষ্টা করেছি, যাতে আমরা সকলে মুসলমান হয়ে যাই। আমরা মুসলমান মেয়ে বিয়ে করতে পারি না। কিন্তু মুসলমানরা হিন্দুর মেয়ে বিয়ে করতে পারে। আমরা materialise করেছি তাই যাতে
পাকিস্তান হয়, আর materialise করি নাই তা যাতে পাকিস্তান না হয়। …..

কিন্তু আগে যদি হায়দ্রাবাদের দিক থেকে বাংলায় হিন্দুদের নিয়ে আসা যেতো,তবে পাকিস্তান হতো না। কিন্তু তা তো হলো না। পাকিস্তান হওয়ায় হিন্দু
মুসলমান উভয়েরই কী ভীষণ ক্ষতিই না হল।” …….. ’’

শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র
ব্রজগোপাল দত্তরায়

শ্রীগৌরাঙ্গ প্রেস

১৩৪৬

হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র পরামর্শ দিয়েছিলেন হিন্দু মহাসভার নাম বদলে “আর্য্য মহাসভা” রাখতে। “রসুলগীতা”র প্রণেতা ঠাকুর শ্রী শ্রী অনুকূলচন্দ্রের মতে, মুসলমানরাও আর্য্য । তাদেরও আর্য্য মহাসভার সদস্য করতে হবে। আরবী শিখে কোরান পাঠ করতে হবে। লীগ যদি ইসলাম বিরোধী কিছু করে তবে প্রিভি কাউন্সিলে শত শত কেস করতে হবে মহানবীর আদর্শ বাঁচাতে। আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে মুসলমানদের, মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে হিন্দুদের স্থানান্তর করে সাম্প্রদায়িক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। তিনি শ্যামাপ্রসাদকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, “এই যদি করে ফেলতে পারেন দেখবেন দেশ ভাগ হবে না । এজন্য টাকার অভাব হবে না । বড় বড় জমিদারদের বোঝান । তাদের সাহায্যে এ কাজ আপনি করতে পারবেন । অত বড় বাবার ছেলে আপনি। আমি আমার সব কিছু দিয়ে আপনাকে সহায়তা করব । আমাদের চেষ্টার ত্রুটিতে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে যদি দেশ ভাগ হয়, তাতে হিন্দু মুসলমান উভয়ের ক্ষতির সম্ভাবনা।” কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।

৩০শে আগষ্ট (১৯৪৬) শ্রীশ্রীঠাকুর পাবনা শহরের হিন্দু-মুসলমান নেতৃবর্গকে ডেকে অনুমতি চান দেওঘর যাওয়ার. তখন সবার কাছ থেকে, বিশেষতঃ মুসলিম নেতা হাকিম সাহেবের কাছে অনুমতি নেন ও তাঁকে অঙ্গীকারবদ্ধ করেন যাতে তিনি আশ্রমের সামগ্রিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আশ্রমে দ্রুতবেগে প্রস্তুতি পর্ব্ব চলতে থাকলো. খবর রাখা হল বিশেষ গোপনে, যাতে জনসমুদ্র এসে কেঁদে কেটে ঠাকুরের মত বদলে না ফেলে। ঠাকুরের পুত্র পূজনীয় বড়দা বিভিন্ন বিভাগের কর্ম্মীদের দিলেন যথোপযুক্ত উপদেশ ও নির্দ্দেশাদি— যাতে তাঁদের অনুপস্থিতি কালেও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সমস্ত কাজ। নির্ধারিত দিনে যথাসময়ে রওনা হলেন ঠাকুর শ্রী শ্রী অনুকূলচন্দ্র আশ্রম ছেড়ে সঙ্গে ঠাকুর পরিবারের সবাই, শ্রীশ্রীঠাকুরের পরিচর্য্যাকারিগণ প্রত্যেকে নিজ নিজ পরিবারবর্গসহ, সপরিবারে স-সহচর ঋত্বিগাচার্যদেব, রাজেন্দ্রনাথ এবং আশ্রমের আরও কতিপয় বিশিষ্ট কর্মী। ঠাকুর শ্রী শ্রী অনুকূলচন্দ্রের ভক্ত সৎসঙ্গীদের মতে, এইভাবেই দেওঘরে সূচনা হল পুরুষোত্তমের নবতর দ্বারকা-লীলার।

সৎসঙ্গীরা বিশ্বাস করেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মথুরা থেকে বৃন্দাবন, বৃন্দাবন থেকে দ্বারকা যাত্রা, হজরত রসূলের মক্কা থেকে মদিনা গমন, পরমদয়াল শ্রীশ্রীঠাকুরের পাবনা ছেড়ে দেওঘরে পদার্পণ যেন বারেবারেই একই সূত্রে বাধা পড়ছে ! তাঁরা যেখানেই গেছেন সেখানেই মানুষ ছুটেছে বাঁচার তাগিদে। শুরু হয়েছে নতুন করে গুছিয়ে নিয়ে পথ চলা।

পোষ্ট ; ঋতুপর্ণ বসু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *