‘হিন্দু মুসলমান মিলন’ একটি হাস্যকর প্রচেষ্টা

Uncategorized

‘হিন্দু মুসলমান মিলন’ এইরকম হাস্যকর প্রচেষ্টা কিংবা বিশ্বাস কখনো কখনো দেখতে পাই শুনতে পাই। যদি কেউ ‘মুসলমান’ হয়েই থাকে তাহলে তার ‘উম্মাহ’ আছে, আছে স্বাতন্ত্র জাতি চেতনা। ঠিক ‘হিন্দু’ যে সে নিজেকে হিন্দু জাতির একজন মনে করে। তারও আছে স্বাতন্ত্র জাতি বিশ্বাস। তাহলে যারা নিজেদের ‘হিন্দু’ মনে করেন আর ‘মুসলিম’ বলে পরিচয় দেন তারা কি করে একই জাতি হিসেবে মিলবে? তারা বড়জোর একটি নৃতাত্ত্বিক জাতি হিসবে মিলতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এই ‘হিন্দু’ আর ‘মুসলমান’ পরিচয় ত্যাগ করতেই হবে। কিন্তু যাদের নিয়ে আলোচনা তারা কি সেই পরিচয় ত্যাগ করতে কোনদিন ঐক্যমতে পৌঁছাবে?

এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যাই হচ্ছে ধর্ম। এটা কমিউনিস্টরা এটা মানতে চায় না। আর ধার্মিকরা তো মনে করে ধর্মই তাদের পরিচয়। অথচ ধর্ম এখানে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভেদ তৈরি করে দেয়। আর সেটাকে কাজে লাগায় রাজনীতি। ভারতীয় সেক্যুলাররা তাই কোনদিন চাইবে না মানুষ কেবল মানুষ পরিচয়ে গড়ে উঠুক। কারণ ভোট। ধর্মবাদী রাজনৈতিকরা তো স্বাভাবিকভাবেই চাইবে না মানুষ তার মানুষ পরিচয়ে পরিচয় দিক। এই আলোচনাগুলো উঠলেই প্রথমে মুসলমানদের উগ্র সশস্ত্র ধর্মীয় আগ্রাসনের প্রসঙ্গ উঠে আসে। সে তুলনায় হিন্দুরা সশস্ত্র নয়। কিন্তু তাতে লাভের লাভ কি হচ্ছে? দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের উপর কি সাদারা আক্রমণ করেছিলো কালো বলে? নাহ, শুধু নিন্মস্তরের মনে করে একসঙ্গে বসতে চায়নি! নিশ্চয় এটি লাদেনের হিংস্রার মত রক্তপাত ঘটায়নি। কিন্তু ফলাফল কি একই নয়? মুসলমানদের জিহাদ আছে হিন্দুর আছে জাতপাত! জিহাদ যেমন মাঝে মাঝে শুনতে পাই এর অর্থ হচ্ছে “নিজের সঙ্গে লড়াই করা” তেমন করেই মাঝে মাঝে শুনতে পাই “আজকাল আর কেউ জাতপাত মানে না”!

মানুষের এই ধর্মীয় পরিচয় ধারণ কিন্তু খুবই বায়বীয় একটা ব্যাপার। এগুলো মানুষ ধরে রাখতে পারছে কেবল রাজনীতিবিদদের কারণে। এবার আপনাদের একটা তথ্য দেই। দ্রুত মধ্যপাচ্যের মানুষ ধর্মহীনতায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করছে! ‘দ্য আরব ব্যারোমিটার’  ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার থেকে জরিপ করে জানতে পারেন লেবাননে বিগত ১০ বছরে ব্যক্তিগতাবে ধর্ম পালনের হার কমেছে ৪৩ শতাংশ! লেবাননের জনসংখ্যার মাত্র এক-চতুর্থাংশ নিজেদের ‘ধার্মিক মুসলমান’ বলে পরিচয় দেয়! এদিকে ইরান নিয়ে অ্যানালাইজিং অ্যান্ড মেসারিং অ্যাটিটিউডস ইন ইরান জানাচ্ছে, ৪০ হাজার মানুষের উপর সমীক্ষা করে জানা গেছে ৪৭% মানুষ বলেছেন এক সময় তারা ধার্মিক ছিলেন এখন তারা নিজেদের ধর্মহীন বলেন। রিলিজিয়াস স্টাডিজের অধ্যাপক পুয়ান তামিমি আরাব এই বিষয়ে মনে করেন এই দেশগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা এখানে বড় একটি ভূমিকা রাখছে। আর ইন্টারনেটকে তিনি বড় একটি “ফ্যাক্টর” বলছেন। আমাদের বামপন্থিরা কিন্তু সব সময় বলতেন পুঁজিবাদ হটাতে পারলেই ধর্ম চলে যাবে এ কারণে নাস্তিকদের উচিত লাল পতাকা নিয়ে লেফট রাইট করা! কিন্তু অবাধ তথ্য প্রবাহে যে সুযোগ ইন্টারনেট করে দিয়েছে তাতে মানুষ এখন সব জানতে পারছে। বামপন্থিরা কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নে ধার্মিকতা থেকে জনগণকে বিরত রাখতে পারেনি। অথচ দিব্যি বলে যাচ্ছে সব কিছুর মুশকিল আছান কমিউনিজম! অধ্যাপক জেমস ডরসের বলেন,  ‘এই চারিত্রিক ভিন্নতা বোঝা যাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সৌদি আরবের তুলনা করলে৷ একদিকে আমিরাতে মদ্যপান নিষিদ্ধ নয়৷ অবিবাহিত নারী-পুরুষ একসাথে থাকতে পারেন সেখানে৷ অন্যদিকে সৌদি আরবে নাস্তিকতা যেন এক ধরনের সন্ত্রাসী আচরণ হিসাবে পরিচিত৷ তাঁর মত, কোন দেশের নাগরিক কতটা ধার্মিক তা নির্ধারণ করে রাষ্ট্রের মনোভাব’। (সূত্র: ডয়চে ভেলে)
একদম, ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তানের দিকে তাকান। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন বদ্ধমনা গবেট ছাড়া আর কিছু জন্ম নেবার কথা নয়। তার উপর ‘বাঙালী মুসলমানের স্বাতন্ত্র ভাষা সাহিত্য’ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রগতিশীলদের ঢুকিয়ে দেয়ার সঙ্গে ইসলামিকদের হিন্দু লেখকদের লেখা বাতিল, বিবর্তনবাদ, সেক্যুলার শিক্ষা, নারী স্বাস্থ্য, অধিকার, জেন্ডার সমতা ইত্যাদিতে হস্তক্ষেপ করে এখানে প্রচন্ড ধর্মবাদী মানুষ তৈরি করা হয়। পাকিস্তানে অভিন্ন প্রক্রিয়া ঘটিয়েছে তাদের রাজনীতিবিদরা। আর এখন ভারত ফিরে যেতে চাচ্ছে প্রাচীন আর্য সমাজে! বেদ উপনিষদকে বাতিল করে দিয়ে বিদ্যাসাগর আধুনিক বিজ্ঞানে ভারতবাসীকে আত্মস্থ হতে বলেছিলেন এবং সেভাবে তিনি ভারতের জন্য ছাত্র তৈরি করেছিলেন তারই হাত ধরে কোলকাতায় উনিশ শতকে বিস্ফোরণ ঘটেছিলো রেঁনেসার। আজ সেই অগ্রগামির উত্তরাধিকারীরা নতুন করে হিন্দু ঋষি আশ্রম বানাতে চাচ্ছে। ভারত এগিয়ে গিয়েছিলো ধর্মকে ত্যাগ করে। পাকিস্তান ডুবেছে ধর্মের মধ্যে ঢুকে গিয়ে। বাংলাদেশ ডুবন্ত। ভারতকেও ডুবাবে আর্য সৈনিকরা! এদিকে চরম ধর্মান্ধ মধ্যপাচ্য আশ্চর্যভাবে প্রগতিশীল হয়ে উঠছে। এ ধারা শাসকরা ধরে রাখলে মধ্যপাচ্য আমূল বদলে যাবে।

শুরু করেছিলাম ‘হিন্দু মুসলমান মিলন’ প্রসঙ্গ নিয়ে। এটা তখনই হবে যখন বেদ কুরআন ত্যাগ করতে পারবে এই অঞ্চলের মানুষ। আপাতত আরবী জিহাদের উত্থান আর তাতে বামপন্থিদের সমর্থনে গেরুয়া ধর্মান্ধদের উত্থানে এই অঞ্চলে বড় কোন আশা নেই।

#সুষুপ্ত_পাঠক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *