হিন্দু সম্পত্তির উপর অধিকার পাল্টালে, দায়িত্বের অধিকার কেন পাল্টাবে না??
কন্যা বা ছেলের পারিবারিক সম্পত্তির অধিকার তখন পাওয়া উচিত, যখন পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব সে পালন করবে। দায়িত্ব ভাগের আইন করেই সম্পত্তি ভাগের আইন পাল্টানো যায়। সরকার নাগরিকদের রক্ষা করে, বিনিময়ে নাগরিকরা ট্যাক্স দেয়।
ইউরোপিয়ান সমাজে 18 বছর পর্যন্ত বাবা মা সন্তানের যাবতীয় দায়িত্ব নিতে আইনত বাধ্য। তারপরে আর বাধ্য নয়। হিন্দু বাবা কন্যাকে পড়ালেখা শেখায়, প্রচুর টাকা খরচ করে বিয়ে দেয়, বিয়ের পরেও প্রচুর খরচ। বাবা না পারলে বাবার পুত্রদের এই দায়িত্ব পালনের কথা। পুত্ররা বাবাকে মৃত্যু পর্যন্ত দেখে, তেমনি মৃত্যুর পরেও শ্রদ্ধা জানাতে অনেক খরচ করে শ্রাদ্ধ করে। মেয়েদের পিতার ফ্যামিলির উপর কোনো দায়িত্ব নেই।
মেয়েরা সম্পত্তির সমান ভাগ চাইলে, সব দায়িত্ব ও নিতে হবে। কিন্তু ম্যাক্সিমাম মেয়ে আর্থিকভাবে স্বামীর উপর নির্ভশীল।
সম্পত্তি বাবার। বাবা চাইলে মৃত্যুর পূর্বে উইল করে যাকে খুশি দিতে পারে বা জীবিত অবস্থায় যাকে খুশি দান করতে পারে। উইল এর ফরম /ড্রাফট বানিয়ে বিয়ের সময় পাত্র পাত্রী বাবা মা কে দেবার আইন হোক। সমস্যার সমাধান হবে। উইল যতবার খুশি পাল্টানো যায়। উইল রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা হোক।
ম্যাক্সিমাম হিন্দু বংশের সম্পত্তি ভোগ করে। ভাগ করে নিজের নামে নামজারী করে, সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে, সম্পত্তির উপর নিজের আইনত অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে না। কারণ এরা এর গুরুত্ব বোঝে না। একসময় মামলা করে। ম্যাক্সিমাম হিন্দুর দেবোত্তর সম্পত্তির নামজারী নেই বলে, অন্যরা আইনত দখল করতে সুযোগ পায়। ম্যাক্সিমাম হিন্দুর দেবোত্তর সম্পত্তির প্রফিট একটা বা কয়েকটা পরিবার পায়, হিন্দু সমাজ পায় না।
সামাজিক পরিস্থিতি চিন্তা করে, হিন্দু সম্পত্তি আইনে দায়িত্ব ও অধিকার বন্টন হয়েছে। দায়িত্ব হলো: বাড়ির বড় সন্তানকে বাবার যা দায়িত্ব, মানে আইনত পরিবারের সবার মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করতে হয়, মর্যাদা রাখতে হয়।
সরকার একটা সার্বজনীন আইন করতে পারে সব ধর্মের নাগরিকদের জন্য, যে প্রত্যেক মানুষ বাধ্যতামূলকভাবে এডাল্ট হলে, উইল করে রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য। নির্দিষ্ট সময় পর আপডেট করতে বাধ্য হবে।
যদি কোন সন্তান বংশের অসম্মান করে বা বংশের প্রতি দায়িত্ব পালন না করে, আইন করা উচিত, বংশের সম্পত্তিতে কোনো অধিকার থাকবে না, Will থাকলেও।
হিন্দুদের এই সব নিয়ম বুঝিয়ে গণভোট দিয়ে হিন্দুরা ঠিক করুক, আইনের সংস্কার চায় কিনা, কি চায়।
আর সরকার যদি আইন করেও, ঠেকাতে না পারেন, নিজের সম্পত্তি নিজের নামে নামজারী করে, উইল করে রেজিস্ট্রি করুন। আর উইল এ লিখুন, যদি বংশের কেউ অমর্যাদা করে, অমর্যাদার লিস্ট দেবেন, তা হলে সম্পত্তি সে পাবে না, আর কে পাবে সেটাও লিখুন। সব লিখিত রাখুন।
প্রত্যেক বাবা-মায়ের সম্পত্তি তাকেই দেয়া উচিত, যে বা যারা তাকে শেষ বয়সে দেখবে। যদি হিন্দু ধর্মসমিতি দেখাশুনা করে, তা হলে তাদের অধিকার থাকা উচিত। অধিকার থাকলে দায়িত্ব থাকে। অধিকার দেবার পূর্বে দায়িত্ব নির্ধারিত হোক।
পশ্চিমা দেশে মৌলিক চাহিদার দায়িত্ব সরকার নেয়, তাই তারা তাদের মত আইন করেছে। হিন্দু সম্পত্তি আইন হিন্দু সমাজের উপর ভিত্তি করেই হয়েছে। রাষ্টের নাক গলানোর পূর্বে, হিন্দু জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের, রক্ষার দায়িত্ব সরকার নিক।
ভারতে কংগ্রেস হিন্দু আইন পাল্টাবার ফলে, হিন্দু পরিবার ভেঙে খান খান হয়েছে। ভাই এখন বোনের শত্রু।
বাবা যে টাকা খরচ করে কন্যাকে বিয়ে দেয়, বিয়েতে খরচ না হলে, সেই টাকার ভাগ সবার হতো। যদি আইন পাল্টায়, যাদের বিয়ের জন্য পরিবার এর টাকা খরচ হয়েছে,সেই টাকা কি সুদসহ পরিবারকে ফেরত দেবে???
কোনো হিন্দু বাবা, তার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পাত্র খোঁজে। পাত্র বউয়ের সম্পত্তির ভাগ নিতে গেলে, তার বউকে তার শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তির ভাগ ননদদের দিতে হবে। মোট সম্পত্তি না বাড়লেও, সম্পর্কের অবনতি হবেই।
সরকার হিন্দুদের মৌলিক চাহিদার দায়িত্ব নেয় না। সম্পত্তির ভাগ এর দায়িত্ব, যার সম্পত্তি তার উপর ছেড়ে দিক।
মৃণাল মজুমদার, বার্লিন, 31.05.2023