হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি
হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি:
শব্দগতভাবে হিসাববিজ্ঞান শব্দটি “হিসাব” এবং “বিজ্ঞান” এ দুটি শব্দের সমন্বিত রূপ । “হিসাব” শব্দের আভিধানিক অর্থ আর্থিক তথ্যাবলির গণনা কার্য । অপরদিকে “বিজ্ঞান” হলো কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাদ্ধমে প্রাপ্ত সুসংবদ্ধ জ্ঞানকে বুঝায় । হিসাববিজ্ঞান শব্দটি ইংরেজি প্রতিশব্দ “Accounting” যার উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ “Calculi” থেকে । “Calculi” শব্দের অর্থ গণনা করা ।
আজকের হিসাববিজ্ঞানের যে আধুনিক রূপ দেখা যায়, তার পেছনে যে ব্যক্তির অবদান সবথেকে বেশি তিনি হলেন-লুকা প্যাসিওলি (Luca Pacioli)। লুকা প্যাসিওলিকেই আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
লুকা প্যাসিওলির পুরো নাম ফ্রা লুকা বার্তোলোমিয়ো দা প্যাসিওলি। তিনি একজন ইতালীয় নাগরিক। লুকা প্যাসিওলি ছিলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি’র একজন নিকটতম বন্ধু ও গৃহশিক্ষক এবং ইতালীয় নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস এর সমসাময়িক। তিনি ছিলেন একাধারে গণিতবিদ ও ধর্মযাজক।
গণিতসশাস্ত্র সম্পর্কে তার লিখিত গ্রন্থ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়। তার লিখিত গ্রন্থের নাম “সুম্মা ডি এরিথমেটিকা জিওমেট্রিকা প্রপোরশনিয়েট প্রপোরশনালিটা (Sunma De Arithmetica Geometrica Proportionate Proportionalita)”। তিনি এই গ্রন্থেই ১৪৯৪ হিসাবরক্ষণের মূল নীতি “দুতরফা দাখিলা (Double Entry)” ব্যাখ্যা করেন ।
হিসাববিজ্ঞানের সংজ্ঞা:
“হিসাব” বলতে কোন বিষয়ের সঠিক ও নির্ভুল তথ্য । অপরদিকে “বিজ্ঞান” হলো কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর পরিক্ষিত সত্যতা বা বিশেষ জ্ঞান । তাই হিসাববিজ্ঞান হলো তথ্যের বিজ্ঞান । কোন প্রতিষ্ঠানের কোন নির্দিষ্ট সময়কালে সংঘঠিত আর্থিক লেনদেনসমূহ লিপিবদ্ধকরনের মাধ্যমে সামগ্রিক ফলাফল ও উক্ত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা নির্ণয় এবং পর্যালোচনা করে তথ্যসমূহ ব্যবহারকারীদের
নিকট পৌঁছে দেওয়ার পদ্ধতিকে হিসাববিজ্ঞান বলে ।
হিসাববিজ্ঞানের কয়েকটি সংজ্ঞা নিম্নে
আলোচনা করা হলোঃ
Weygandt, Kieso, Kimmel- এর মতে” হিসাববিজ্ঞান হল একাধারে একটি সেবা প্রদানমূলক কার্যক্রম, একটি বর্ণনা এবং সর্বোপরি একটি তথ্যব্যবস্থা যা একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনসমূহ পরিমাপ, লিপিবদ্ধ, শ্রেণিবদ্ধ এবং সংক্ষিপ্তকরনের
মাধ্যমে ফলাফল ও চিত্র প্রদান করে এবং তার সাথে জড়িত আগ্রহী বিভিন্ন পক্ষ তথা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।”
American Institute of Certified Public Accountants (AICPA)- এর মতে, “আর্থিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লেনদেন ও ঘটনা সমূহকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে এবং অর্থের পরিমাণে লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণিবদ্ধকরন, সংক্ষিপ্তকরণ ও তার ফলাফল বিশ্লেষণ করার কৌশলকে হিসাব বিজ্ঞান বলে।”
Financial Accounting Standard Board (FASB) – এর প্রদত্ত সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “ হিসাববিজ্ঞান হল আর্থিক তথ্যের বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের নিকট একটি প্রতিষ্ঠানের অথবা ইউনিটের আর্থিক কার্যাবলির পরিমাপ এবং প্রতিবেদনের কাজে ব্যবহৃত পক্রিয়া ।”
American Accounting Association (AAA) 1966 – এর প্রদত্ত সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “যে পদ্ধতি আর্থিক তথ্য নির্ণয়, পরিমাপ ও সরবরাহ করে উহার ব্যবহারকারীদের বিচার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে তাকে হিসাববিজ্ঞান বলে ।”
পরিশেষে বলা যায় যে, হিসাব বিজ্ঞান হল এমন একটি তথ্য ব্যবস্থা, যা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনসমূহ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণিবদ্ধকরন, সংক্ষিপ্তকরণ, আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ, বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাবহারকারীদের তথ্য সরবরাহ করাকে বুঝায় ।
হিসাববিজ্ঞানকে তথ্য সরবরাহের ভাষা বলা হয় কেন?
আধুনিক বিশ্বে হিসাববিজ্ঞান ব্যবসায়িক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রাণস্বরূপ । ভাষার মাধ্যমে যেমন কোনো অবস্থা কিংবা তথ্য জানা যায়, তেমনই হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল এবং আর্থিক অবস্থা জানা বা বোঝা যায়। ভাষা না বুঝলে যেমন ভাবের আদান-প্রদান করা যায় না, তেমনই হিসাববিজ্ঞান ছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও আর্থিক ফলাফল জানা সম্ভব নয় । তাই হিসাববিজ্ঞানকে তথ্য সরবরাহের ভাষা বলা হয় ।
হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয় কেন?
ভাষা হল কতগুলো শব্দ, প্রতীক ও সাংকেতিক চিহ্নের সমষ্টি যার মাধ্যমে মানুষ তার মনের ভাব লিখিত ও মৌখিকভাবে প্রকাশ করে । অন্যদিকে, প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একটি কৃত্তিম ব্যক্তি সত্তা আছে । কৃত্তিম ব্যক্তি সত্তা হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠান তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ স্থাপন বা তথ্য সরবরাহ করে লিখিত দলিলের মাধ্যমে যাকে হিসাববিজ্ঞানের ভাষায় আর্থিক প্রতিবেদন বলে । আর্থিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারিগণ ব্যবসায়ের আয়-ব্যয়ের পরিমান, লাভ-ক্ষতির পরিমান, সম্পত্তির ও দায়ের পরিমান, ব্যবসায়ের দেনাদার ও পাওনাদারের অবস্থা , আর্থিক অবস্থা প্রকাশ, নগদ তহবিলের পরিমাণসহ যাবতীয় আর্থিক তথ্যাবলি সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারে ।
হিসাববিজ্ঞান ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ প্রয়োজনীয় আর্থিক তথ্যের মাধ্যমে ব্যবসায় সম্পর্কে বিভিন্ন ধারনা লাভ করে বা যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে এবং হিসাববিজ্ঞানে প্রস্তুত করা বিবরণী ও প্রতিবেদনের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানা ও বোঝা যায় বলেই হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয় ।
হিসাববিজ্ঞান তথ্য ব্যবস্থা
হিসাববিজ্ঞানের তথ্য ব্যবস্থায় দুটি পক্ষ জড়িত থাকে।যথাঃ তথ্য প্রস্তুতকারী এবং তথ্যের ব্যবহারকারী । হিসাববিজ্ঞান ব্যবসায়ের ভাষা হিসেবে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট পক্ষের নিকট তথ্য সরবরাহ কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় বর্তমানে হিসাববিজ্ঞানকে একটি তথ্য ব্যবস্থা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। হিসাববিজ্ঞান তথ্যের ব্যবহারকারী ২ ধরণেরঃ
অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী: যারা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও মালিকানার আওতাভুক্ত তাদেরকে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী বলা হয় । যেমনঃ মালিক, কর্মচারী, ব্যবস্থাপকগণ, কম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অর্থ পরিচালক ।
বাহ্যিক ব্যবহারকারী: যারা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত কিন্তু মালিকানা এবং ব্যবস্থাপনার অংশ নন তাদেরকে বাহ্যিক ব্যবহারকারী বলা হয়; যেমনঃ পাওনাদার,বিনিয়োগকারী, ভোক্তা, গবেষক, কোম্পানি নিবন্ধক, কর কর্তৃপক্ষ, সরকার, নিরীক্ষক ইত্যাদি ।
ঘটনা
সাধারণত কোন কিছু সঙ্ঘঠিত হওয়াকে ঘটনা বলে । যেমনঃ স্কুলে যাওয়া, বাজার করা, পরীক্ষায় পাশ করা, মাল ক্রয়ের ফরমায়েশ প্রদান, পণ্য ক্রয়, পণ্য বিক্রয় ইত্যাদি ।
ঘটনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১. অনার্থিক ঘটনাঃ যে সব ঘটনা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় না অর্থাৎ যে সব ঘটনা অর্থের সাথে সম্পর্কিত নয় তাকে অনার্থিক ঘটনা বলে ।
যেমনঃ স্কুলে যাওয়া, সভায় বক্তৃতা দেওয়া, পরীক্ষায় পাশ করা, মাল ক্রয়ের ফরমায়েশ প্রদান ইত্যাদি ।
১. আর্থিক ঘটনাঃ যে সব ঘটনা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় অর্থাৎ যে সব ঘটনা অর্থের সাথে সম্পর্কিত তাকে অনার্থিক ঘটনা বলে ।
যেমনঃ বাজার করা, পণ্য ক্রয়, পণ্য বিক্রয়, ভাড়া প্রদান, বিয়ের খরচ ইত্যাদি ।
লেনদেন
লেনদেনকে হিসাববিজ্ঞানের কাঁচামাল (Raw Material) হিসেবে বিবেচনা করা হয় । লেন এবং দেন এই দুটি শব্দ থেকে লেনদেন শব্দটি গঠিত । লেন অর্থ লওয়া বা আদান এবং দেন অর্থ দেওয়া বা প্রদান । সুতরাং লেনদেনের আভিধানিক অর্থ হলো আদান-প্রদান । হিসাববিজ্ঞানে কোন ব্যবসায়ে অর্থ ও অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য সকল ধরনের অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে লেনদেন বলে । যেমনঃ রাফসানকে ১,০০০ টাকা প্রদান করা হল, কর্মচারীদের ৬,০০০ টাকা বেতন প্রদান করা হল, বিক্রয় করা হল ৫,০০০ টাকা ইত্যাদি ।
লেনদেনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য :
১. লেনদেন অবশ্যই আর্থিক মূল্যে পরিমাপযোগ্য
২. দ্বৈতসত্ত্বার অধিকারী হবে (ডেবিট ও ক্রেডিট)
৩. লেনদেনের ফলে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থায় (A=L+OE) অবশ্যই পরিবর্তন হবে
৪. স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র
৫. পণ্য দ্রব্য বা সেবার বিনিময় থাকতে হবে
সকল লেনদেন ঘটনা কিন্তু সকল ঘটনা লেনদেন নয়
সাধারণত কোন কিছু সঙ্ঘঠিত হওয়াকে ঘটনা বলে । যেমনঃ স্কুলে যাওয়া, বাজার করা, পরীক্ষায় পাশ করা, মাল ক্রয়ের ফরমায়েশ প্রদান, পণ্য ক্রয়, পণ্য বিক্রয় ভাড়া প্রদান, বিয়ের খরচ ইত্যাদি । ঘটনা আর্থিক হতে পারে আবার না ও হতে পারে ।
অন্যদিকে, লেনদেন হল হিসাববিজ্ঞানে কোন ব্যবসায়ে অর্থ ও অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য সকল ধরনের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বা ঘটনাকে বুঝায় । যেমনঃ রাফসানকে ১,০০০ টাকা প্রদান করা হল, কর্মচারীদের ৬,০০০ টাকা বেতন প্রদান করা হল, বিক্রয় করা হল ৫,০০০ টাকা ইত্যাদি । তাই বলা যায় যেসকল ঘটনা আর্থিক শুধু সেগুলোকে লেনদেন বলে ।
ব্যবসায় জগতে এরকম বিভিন্ন ঘটনার উদ্ভব হয় । কিন্তু সমস্ত ঘটনাকে হিসাবের বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয় না কারণ সকল ঘটনা লেনদেন নয় । শুধুমাত্র অর্থের অংকে পরিমাপযোগ্য ঘটনা যেটি ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করে সেই ঘটনাকেই লেনদেন হিসেবে হিসাবের বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয় ।
আবার অদৃশ্য ভাবে কোন আর্থিক ঘটনা ঘটে থাকলে তাহাও লেনদেন হতে পারে। যেমন: সম্পদ ব্যবহারের ফলে যে মূল্য হ্রাস হয় এটি ও একটি লেনদেন।
সুতরাং বলা যায়, সকল লেনদেন ঘটনা কিন্তু সকল ঘটনা লেনদেন নয় ।
হিসাব সমীকরণ
কোনো প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মোট সম্পদের পরিমাণ, মালিকানাস্বত্ব ও বহির্দায়ের সবসময় সমান হবে । যে সমীকরণের মাধ্যমে এই সমতা প্রমাণ করা হয় তাকে হিসাব সমীকরণ বলে । অথবা, ব্যবসায়ের মোট সম্পত্তি এবং দায়ের সর্ম্পক প্রকাশ করা হয় তাকে হিসাব সমীকরন বা Accounting Equation বলা হয় ।
হিসাব সমীকরণটি হলঃ
A = L + OE
এখানে, A = Assets (সম্পত্তি), L = Liabilities (দায়)
OE = Owner’s Equity (মালিকানা স্বত্ত্ব)
Assets (A) = Liabilities (L) + Owner’s Equity (OE)
অর্থাৎ সম্পদ = দায় + মালিকানা স্বত্ব
মালিকানা স্বত্ব সরাসরি প্রভাবিত হয় লাভ, লোকসান, উত্তোলন এবং অতিরিক্ত মূলধন আনয়নের মাধ্যমে । প্রতিষ্ঠানের লাভ হলে মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি পায় এবং লোকসান হলে মালিকানা স্বত্ব হ্রাস পায়, উত্তোলন করলে মালিকানা স্বত্ব হ্রাস পায় এবং অতিরিক্ত মূলধন আনয়নের মাধ্যমে মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি পায় ।
Owner’s Equity (OE) মালিকানা স্বত্ব = Capital (C) + Revenue (R) + Additional Capital (A) – Expense (E) – Drawings (D)
(OE) = C + R + A – E – D
মালিকানা স্বত্ব = মুলধন +আয় + অতিরিক্ত মূলধন – ব্যয় – উত্তোলন
হিসাব সমীকরণটি সম্প্রসারিত করে লেখা যায়ঃ A = L + (C + R + A – E – D)
Assets – সম্পদ
Liabilities –দায়
Capital – মুলধন
Revenue – আয়
Additional Capital – অতিরিক্ত মূলধন
Expense – ব্যয়
Drawings – উত্তোলন
সম্পদঃ
সম্পত্তি হলো প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন এবং কোন বস্তু যা প্রতিষ্ঠানকে ভবিষ্যত সুবিধা প্রদান করবে । সম্পত্তি সাধারণত মূলধনজাতীয় ব্যয় থেকে সৃষ্টি হয় এবং ভবিষ্যত সুবিধা প্রদান করে । সম্পত্তি সাধারণত ডেবিট ব্যালেন্স (জের) নির্দেশ করে । সম্পদ হলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন পরিসম্পদ । সম্পত্তি বৃদ্ধি পেলে ডেবিট এবং সম্পত্তি হ্রাস পেলে ক্রেডিট করতে হবে।
সম্পদসমূহঃ নগদ টাকা, ব্যাংক জমা, দেনাদার, প্রাপ্য বিল, মজুদ পণ্য, আসবাবপত্র, দালানকোঠা, বকেয়া আয়, অগ্রিম ব্যয়, সুনাম, প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক, লাভ-লোকসান আবণ্টন হিসাবের ডেবিট উদ্বৃত্ত ইত্যাদি ।
কোন প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদ নির্ণয়ঃ
বিবরণটাকাপ্রতিষ্ঠানের দায়ের পরিমান
(+) প্রতিষ্ঠানের মালিকানা স্বত্বের পরিমান
প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তি
***
***
***
দায়ঃ
দায় সাধারণত ক্রেডিট ব্যালেন্স ( জের) নির্দেশ করে। কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন সম্পদের উপর ঐ প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় পক্ষের দাবির সমষ্টিকে দায় বলে। দায় বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট এবং দায় হ্রাস পেলে ডিবিট করতে হবে।
যেমন- বিবিধ পাওনাদার, প্রদেয় বিল, বকেয়া ব্যয়, অগ্রিম আয় বা অনুপার্জিত আয়, ব্যাংক জমাতিরিক্ত হিসাব ঋণপত্র, বন্ধকী ঋণ, ইত্যাদি ।
কোন প্রতিষ্ঠানের মোট দায় নির্ণয়ঃ
বিবরণটাকাকোন প্রতিষ্ঠানের সম্পদের পরিমান
(-) প্রতিষ্ঠানের মালিকানা স্বত্বের পরিমান
প্রতিষ্ঠানের মোট দায়
***
***
***
মালিকানা সত্ত্বঃ
সম্পত্তির বিপরীতে মালিকের দাবীকে মালিকানা স্বত্ত্ব বা মূলধন বলে। স্বত্বাধিকার সাধারনত ক্রেডিট ব্যালেন্স (জের) নির্দেশ করে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সম্পদের উপর মালিকের দাবির পরিমাণকে মালিকানা স্বত্ব বলে। স্বত্বাধিকার বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট এবং স্বত্বাধিকার হ্রাস পেলে ডিবিট করতে হবে ।
যেমন- শেয়ার মূলধন, শেয়ার অধিহার, জমাকৃত মুনাফা, সাধারণ সঞ্চিতি, বিশেষ সঞ্চিতি, ইত্যাদি।
কোন প্রতিষ্ঠানের মোট স্বত্বাধিকার নির্ণয়ঃ
বিবরণটাকাকোন প্রতিষ্ঠানের সম্পদের পরিমান
(-) প্রতিষ্ঠানের মোট দায়ের পরিমান
প্রতিষ্ঠানের মোট স্বত্বাধিকার
***
***
***
অথবাঃ
প্রতিষ্ঠানের মোট স্বত্বাধিকার নির্ণয়ঃ
বিবরণটাকাপ্রারম্ভিক মুলধন
(+) অতিরিক্ত মুলধন
(+) মুলধনের সুদ
(-) উত্তোলন
(-) উত্তোলনের সুদ
(+) অর্জিত আয়সমুহ
(-) সংঘটিত ব্যয়সমুহ
মালিকানা স্বত্বের পরিমান
***
***
***
***
***
***
***
****
হিসাব লেনদেনের প্রকারভেদ
প্রত্যেকটি লেনদেন এই হিসাব সমীকরণের উপর প্রভাব ফেলে। লেনদেনের এই প্রভাবকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
১. পরিমাণগত বা নীট পরিবর্তন
২. গুণগত বা কাঠামোগত পরিবর্তন
(নমুনা সারনি)
রাফসান এন্টারপ্রাইজ
বিবরণী ছক (হিসাব সমীকরনে লেনদেনের সারনি)
তারিখসম্পদসমুহ=দায় ও মালিকানা স্বত্বমন্তব্যনগদদেনাদার / প্রাপ্য হিসাবমনিহারী বা সাপ্লাইজআসবাবপত্রপ্রদেয়
বিল
পাওনাদারমুলধনমোট***********************
১. পরিমাণগত বা নীট পরিবর্তন : যদি কোনো লেনদেনের দ্বারা হিসাব সমীকরণের দুই পাশেই সমপরিমাণ অংক দ্বারা হ্রাস বা বৃদ্ধি হয়, তাহলে তা পরিমাণগত বা নীট পরিবর্তন। যেমন- নগদে বেতন প্রদান করা হলো ৫,০০০ টাকা। এর ফলে সম্পত্তি (নগদ) ও মালিকানা স্বত্ত্ব (বেতন) উভয়ই ৫,০০০ টাকা হ্রাস পায়।
২. গুণগত বা কাঠামোগত পরিবর্তন : যদি কোনো লেনদেনের দ্বারা হিসাব সমীকরণের শুধুমাত্র একটি পাশ পরিপূরকভাবে হ্রাস ও বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা গুণগত বা কাঠামোগত পরিবর্তন। যেমন- নগদে আসবাবপত্র ক্রয় করা হলো ১০,০০০ টাকা। এর ফলে সম্পত্তি (নগদ) একবার হ্রাস পায়, এবং আরেকবার সম্পত্তি (আসবাবপত্র) বৃদ্ধি পায়।
হিসাব
লেনদেনের সংক্ষিপ্ত শ্রেণীবদ্ধ বিবরণকে হিসাব বলে। আর্থিক ঘটনা বা লেনদেনের সমজাতীয় পক্ষগুলোকে উপযুক্ত শিরোনামে ও নির্দিষ্ট ছকে সংক্ষিপ্তাকারে প্রদর্শিত বিবরণীকে হিসাব বলে।
সনাতন পদ্ধতিতে হিসাবকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় ।
ক) ব্যক্তিবাচক হিসাবঃ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত হিসাব হল ব্যক্তি বাচক হিসাব । একটি পক্ষ সুবিধা গ্রহণকারী ও অপরটি সুবিধা প্রদানকারী । সুবিধা গ্রহণকারী ডেবিট ও সুবিধা প্রদানকারীকে ক্রেডিট করা হয় । যেমন, শফিক জনতা বাংকে ১২০০০ টাকা জমা দিল ।
এখানে জনতা বাংক সুবিধা গ্রহণকারী ও শফিক সুবিধা প্রদানকারী । তাই জনতা বাংক হবে ডেবিট ও শফিক হবে ক্রেডিট ।
ব্যক্তিবাচক হিসাব আবার তিন ধরনের। যথাঃ
১. স্বাভাবিক ব্যক্তিবাচক হিসাবঃ যাদের অস্তিত্ব আছে এবং উদ্দীপনায় সারা দেয় তাদের হিসাব হলো স্বাভাবিক ব্যক্তিবাচক হিসাব ।
যেমনঃ রাফসান হিসাব, মম হিসাব, মেহ্জাবিন হিসাব ইত্যাদি ।
২. কৃত্তিম ব্যক্তিবাচক হিসাবঃ যাদের অস্তিত্ব আছে এবং উদ্দীপনায় সারা দেয় না তাদের হিসাব হলো স্বাভাবিক ব্যক্তিবাচক হিসাব ।
যেমনঃ সোনালি ব্যাংক হিসাব, মেসার্স রাফসান এন্টারপ্রাইজ হিসাব ইত্যাদি ।
৩. প্রতিনিধিত্বমলূক ব্যক্তিবাচক হিসাবঃ কোন আয় বা ব্যয় হিসাব যদি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে তবে তাকে প্রতিনিধিত্বমলূক ব্যক্তিবাচক হিসাব ।
যেমনঃ অগ্রিম ভাড়া হিসাব, বকেয়া বেতন হিসাব ইত্যাদি ।
খ) সম্পত্তিবাচক বা বাস্তব হিসাবঃ ব্যবসায়ে সম্পত্তির নামে যদি হিসাব সংরক্ষণ করা হয় তবে তাকে সম্পত্তিবাচক হিসাব বলে । সম্পদ আসে বা বৃদ্ধি পায় তবে উক্ত সম্পত্তিকে ডেবিট ও সম্পদ কোন কারণে হ্রাস পায় তবে উক্ত সম্পত্তিকে ক্রেডিট করতে হবে । যেমনঃ ১০০০০ টাকা দিয়ে একটি আসবাবপত্র ক্রয় করা হল ।এখানে আসবাবপত্র নামক একটি সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ায় আসবাবপত্র হিসাবকে ডেবিট এবং নগদ টাকা ব্যবসায় হতে চলে যাওয়ায় নগদ হিসাবকে ক্রেডিট করতে হবে ।
গ) নামিক বা আয়–ব্যয় বাচক হিসাবঃ ব্যবসায়ে সংঘটিত সকল আয় ব্যয় সম্পর্কিত হিসাবকে নামিক বা আয়-ব্যয় বাচক হিসাব ।
সকল প্রকার ব্যয় বা ক্ষতিকে ডেবিট ও সকল প্রকার আয় বা লাভকে ক্রেডিট করা হয় । যেমন-কর্মচারীকে বেতন প্রদান ২০০০ টাকা , পণ্য বিক্রয় ৩০,০০০ টাকা ইত্যাদি ।
এখানে বেতন প্রদান করা ব্যয় হয়েছে তাই বেতন হিসাব ডেবিট হবে । পরের লেনদেনে পণ্য বিক্রয় করায় আয় হয়েছে তাই বিক্রয় হিসাব ক্রেডিট হবে ।
মালিকানা স্বত্বকে হ্রাস-বৃদ্ধি করে এমন উপাদান
আয় হিসাব: আয় সাধারণত ক্রেডিট ব্যালেন্স ( জের) নির্দেশ করে। আয় বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট এবং আয় হ্রাস পেলে ডিবিট করতে হবে। আয় মালিকানা স্বত্বকে বৃদ্ধি করে।
আয়ের উদাহরণঃ বিক্রয় হিসাব, প্রাপ্ত ভাড়া হিসাব, সুদ আয় হিসাব, প্রাপ্ত কমিশন হিসাব, প্রাপ্ত বাট্টা হিসাব, বিক্রয় ফেরত হিসাব, বিনিয়োগের সুদ
ব্যয় হিসাব ঃ ব্যয় সাধারণত ডেবিট ব্যালেন্স (জের) নির্দেশ করে। ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ডেবিট এবং ব্যয় হ্রাস পেলে ক্রেডিট করতে হবে।
ব্যয় মালিকানা স্বত্বকে হ্রাস করে।
ব্যয়ের উদাহরণঃ ক্রয় হিসাব, পরিবহন ব্যয় হিসাব, বিক্রয় পরিবহণ হিসাব, বেতন হিসাব, মজুরি হিসাব, ভাড়া হিসাব, মনিহারি হিসাব, বিজ্ঞাপন হিসাব, সুদ ব্যয় হিসাব, প্রদত্ত কমিশন হিসাব, প্রদত্ত বাট্টা হিসাব, অনাদায়ী পাওনা হিসাব, মেরামত হিসাব, অবচয় হিসাব, আমদানি শুল্ক হিসাব, ক্রয় ফেরত হিসাব,
উত্তোলনঃ মালিক ব্যক্তিগত কাজের জন্য নগদ ও পণ্য উত্তোলন করতে পারে। উত্তোলন মালিকানা স্বত্বকে হ্রাস করে।
অতিরিক্ত বিনিয়োগঃ ব্যবসায় পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত টাকা , কোন সম্পদ ইত্যাদি মুলধন হিসাবে আনয়ন করলে তা মালিকানা স্বত্বকে বৃদ্ধি করে।
হিসাব সমীকরন ঘরের নমূনা হলো নিম্নরুপঃ-
রাফসান এন্টারপ্রাইজ
বিবরণী ছক (হিসাব সমীকরনে লেনদেনের সারনি)
তারিখসম্পদসমুহ=দায় ও মালিকানা স্বত্বমন্তব্যনগদদেনাদারমনিহারী বা সাপ্লাইজআসবাবপত্রপ্রদেয়
বিল
পাওনাদারমুলধনমোট***********************
Note: যে সমস্ত লেনদেনগুলো মূলধনের সাথে (+ ) বা ( – ) হবে তার ক্ষেত্রে মন্তব্য এর ঘরে মন্তব্য হবে ।
Note: হিসাব সমীকরন প্রমান করতে না বললে যার যার হিসাব তার ঘরের যোগফল নামিয়ে জের টানতে হবে ।
Note: হিসাব সমীকরন প্রমান করতে বলা হলে সূত্র হবেঃ-
হিসাব সমীকরন প্রমান
আমরা জানি,
সম্পদ = দায় + মালিকানা স্বত্ব
সম্পদের নাম = দায় + মালিকানা স্বত্বের নাম
সম্পদের পরিমান (টাকায়) = দায় + মালিকানা স্বত্বের পরিমান (টাকায়)
**** = **** (প্রমানিত).
Note: যদি সম্পদ বা দায় বের করতে বলে তা হলে সূত্র হবেঃ-
সম্পদ = দায় + মালিকানা স্বত্ব.
Note: যদি প্রশ্নে লাভ-লোকসান বিবরণী, মালিকানা স্বত্ব এবং উদ্বত্তপত্র করতে বলে তাহলে সম্পদের যোগফল এবং মন্তব্য এর আয় ব্যয় নিয়ে করতে হবে ।
Note: যাহা নির্ণয় করতে হবে তার নামঃ
প্রারম্ভিক মালিকানা স্বত্ব + অতিরিক্ত মুলধন + মোট আয় = মোট খরচ + উত্তোলন + সমাপনী মালিকানা স্বত্ব
উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে যেকোন একটি বিষয় নির্ণয় করতে হবে ।
ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ে স্বর্ণসূত্র / সনাতন পদ্ধতি
লেনদেনকে হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করার জন্য দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুসারে নিয়ম বা সূত্র অনুযায়ী ডেবিট এবং ক্রেডিট করতে হয় । ডেবিট এবং ক্রেডিট করার প্রাচীনতম নিয়মকে স্বর্ণসূত্র (Golden Rule) বলে । এ সূত্র অনুযায়ী ডেবিট এবং ক্রেডিট করার জন্য হিসাবকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় । নিম্নে এই তিন শ্রেণির হিসাবের নামসহ এবং ডেবিট – ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়ম আলোচনা করা হলঃ
১. ব্যক্তিবাচক হিসাবঃ
গ্রহীতা ==== ডেবিট
দাতা ===== ক্রেডিট
২. সম্পত্তিবাচক হিসাবঃ
সম্পত্তি আসলে ====ডেবিট
সম্পত্তি গেলে / কমলে =====ক্রেডিট
৩. আয়–ব্যয় বাচক বা নামিক হিসাবঃ
সকল খরচ বা ক্ষতি ====ডেবিট
সকল আয় বা লাভ =====ক্রেডিট
বিভন্ন হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়ের আধুনিক পদ্ধতি
সম্পদ হিসাবঃ সম্পত্তি সাধারণত ডেবিট ব্যালেন্স (জের) নির্দেশ করে।
সম্পদ বৃদ্ধি পেলে . . . . . . . . . . . . ডেবিট
সম্পদ হ্রাস পেলে . . . . . . . . . . . . ক্রেডিট
দায় হিসাবঃ দায় সাধারণত ক্রেডিট ব্যালেন্স ( জের) নির্দেশ করে।
দায় হ্রাস পেলে . . . . . . . . . . . . ডেবিট
দায় বৃদ্ধি পেলে . . . . . . . . . . . . ক্রেডিট
স্বত্বাধিকার হিসাবঃ স্বত্বাধিকার সাধারনত ক্রেডিট ব্যালেন্স (জের) নির্দেশ করে।
স্বত্বাধিকার হ্রাস পেলে . . . . . . . . . . . . ডেবিট
স্বত্বাধিকার বৃদ্ধি পেলে . . . . . . . . . . . . ক্রেডিট
আয় হিসাবঃ আয় সাধারণত ক্রেডিট ব্যালেন্স ( জের) নির্দেশ করে।
আয় হ্রাস পেলে . . . . . . . . . . . . ডেবিট
আয় বৃদ্ধি পেলে . . . . . . . . . . . . ক্রেডিট
ব্যয় হিসাবঃ ব্যয় সাধারণত ডেবিট ব্যালেন্স (জের) নির্দেশ করে।
ব্যয় বৃদ্ধি পেলে . . . . . . . . . . . . ডেবিট
ব্যয় হ্রাস পেলে . . . . . . . . . . . . ক্রেডিট
GAAP (Generally Accepted Accounting Principles) বা সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা
সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা বলতে এমন কতগুলো মৌলিক বা স্বতঃসিদ্ধ সত্যকে বুঝায় যেগুলো হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সকলের নিকট গ্রহনযোগ্য হয় এবং সকল ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রমাণিত হয় । স্বতঃসিদ্ধ সত্যকে বুঝায় যেগুলো হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য এবং সকল ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রমাণিত । স্বতঃসিদ্ধ বলতে এমন সত্যকে বুঝায় যার কোন প্রমানের প্রয়োজন হয় না । GAAP (Generally Accepted Accounting Principles) বা সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা বলতে হিসাব সম্পর্কিত কিছু ধারনা ও প্রয়োগকে বুঝায় ।
১৯৭৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক হিসাব মান কমিটি International Accounting Standard Committee বা IASC (বর্তমানে যা International Accounting Standard Board বা IASB নামে পরিচিত) এবং Financial Accounting Standard Board বা FASB প্রতিষ্ঠার পর থেকে হিসাববিজ্ঞানে তাত্ত্বিক দর্শন ও প্রয়োগ রীতি নির্দেশকারী ধারনা ও প্রথাসমূহকে আলাদাভাবে বিবেচনা না করে সবগুলোকে একত্রে হিসাব নীতি (Accounting Principles) বলে গণ্য করা হয় । যেগুলো GAAP (Generally Accepted Accounting Principles) বা সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা বলে পরিচিত । Financial Accounting Standard of USA এবং Securities and Exchange Commission – SEC এই নীতিগুলোর প্রতিষ্ঠাতা যা বিশ্বের সকল হিসাববিজ্ঞানিগন মেনে চলেন ।
কিছু হিসাব নামের পরিচিতি ও আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাবের শ্রেণীবিভাগ
ক্রমিক নংহিসাবের নাম / হিসাব খাতআধুনিক পদ্ধতিতে
হিসাবের শ্রেণী
০১
নগদান হিসাব, ব্যাংক হিসাব, আসবাবপত্র হিসাব, কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি হিসাব, অফিস সরঞ্জাম হিসাব, দালানকোঠা হিসাব, বিনিয়োগ হিসাব, দেনাদার হিসাব, প্রাপ্য বিল হিসাব, সমাপনী মজুদ, অগ্রিম ব্যয় হিসাব, প্রাপ্য আয় হিসাব, অগ্রিম বীমা সেলামী হিসাব, সুনাম হিসাব, অগ্রিম ভাড়া হিসাব, প্রদত্ত ঋণ হিসাব, শেয়ার ক্রয় হিসাব, ইজারা সম্পত্তি হিসাব, প্রাথমিক খরচাবলি, মজুদ পণ্য হিসাব
সম্পত্তি হিসাব
০২
ঋণ হিসাব, পাওনাদার হিসাব, প্রদেয় বিল হিসাব, অগ্রিম আয় হিসাব, বকেয় ব্যয় হিসাব, ব্যাংক জমাতিরিক্ত হিসাব
দায় হিসাব
০৩
মুলধন হিসাব, উত্তোলন হিসাব, উত্তোলনের সুদ, আয়কর হিসাব, সাধারণ সঞ্চিতি হিসাব, অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি হিসাব, মুলধনের সুদ হিসাব
স্বত্বাধিকার হিসাব
০৪
বিক্রয় হিসাব, প্রাপ্ত ভাড়া হিসাব, সুদ আয় হিসাব, প্রাপ্ত কমিশন হিসাব, প্রাপ্ত বাট্টা হিসাব, বিক্রয় ফেরত হিসাব, বিনিয়োগের সুদ
আয় হিসাব
০৫
ক্রয় হিসাব, পরিবহন ব্যয় হিসাব, বিক্রয় পরিবহণ হিসাব, বেতন হিসাব, মজুরি হিসাব, ভাড়া হিসাব, মনিহারি হিসাব, বিজ্ঞাপন হিসাব, সুদ ব্যয় হিসাব, প্রদত্ত কমিশন হিসাব, প্রদত্ত বাট্টা হিসাব, অনাদায়ী পাওনা হিসাব, মেরামত হিসাব, অবচয় হিসাব, আমদানি শুল্ক হিসাব, ক্রয় ফেরত হিসাব
ব্যয় হিসাব
ক্রয় সংক্রান্ত লেনদেন
১. ক্রয় ১০০০ টাকা ।
২. পণ্য ক্রয় ১০০০ টাকা ।
৩. নগদে ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় ।
৪. রাফসানের নিকট থেকে নগদে ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় ।
৫. রাফসানের নিকট থেকে ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় ।
৬. রাফসানের নিকট থেকে ধারে/বাঁকিতে ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় ।
৭. ধারে/বাঁকিতে ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় ।
৮. রাফসানের নিকট থেকে ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় যার মধ্যে ৩০০ টাকা ধারে/বাঁকিতে ।
৯. ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় যার মধ্যে ৮০% নগদে অবশিষ্ট বাঁকিতে ।
১০. রাফসানের নিকট থেকে ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় যার মধ্যে ৩০০ টাকা নগদে অবশিষ্ট চেকে ।
১১. চেকের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় ১০০০ টাকা ।
১২. সোনালী ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় ১০০০ টাকা ।
১৩. বিলের বিনিময়ে পণ্য ক্রয় ১০০০ টাকা ।
১৪. বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে আসবাবপত্র ক্রয় ১০০০ টাকা ।
১৫. ব্যবসায়ে উদ্দেশ্যে আসবাবপত্র ক্রয় ১০০০ টাকা ।
১৬. পণ্য ক্রয় ১০০০ টাকা ও এই ক্রয় বাবদ ১০০ টাকা পরিবহণ খরচ প্রদান করা হল ।
১৭. ব্যবসায়ে উদ্দেশ্যে আসবাবপত্র ক্রয় ১০০০ টাকা ও এই ক্রয় বাবদ ১০০ টাকা পরিবহণ খরচ প্রদান করা হল ।
১৮. ১০০০ টাকার শেয়ার / ডিবেঞ্চার / সঞ্চয়পত্র / প্রাইজ বন্ড / ঋণপত্র / বন্ড / সার্টিফিকেট ক্রয় করা হলো ।
১৯. কাগজ / কলম / কালি / কার্বন / মনিহারি ক্রয় /অফিস সাপ্লাইজ ক্রয় ১০০০ টাকা ।
২০. ব্যবসায়ে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যন্ত্রপাতি ক্রয় ১০০০০০ টাকা যার পরিবহণ খরচ ২০০০ টাকা ও সংস্থাপন ব্যয় ৮০০০ টাকা প্রদান করা হল ।
*** ক্রয় ফেরত ১০০০ টাকা ।
বিক্রয় সংক্রান্ত লেনদেন
১. বিক্রয় ১০০০ টাকা ।
২. পণ্য বিক্রয় ১০০০ টাকা ।
৩. নগদে ১০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় ।
৪. রাফসানের নিকট নগদে ১০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় ।
৫. রাফসানের নিকট ১০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় ।
৬. রাফসানের নিকট ধারে/বাঁকিতে ১০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় ।
৭. ধারে/বাঁকিতে ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় ।
৮. রাফসানের নিকট ১০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় যার মধ্যে ৩০০ টাকা ধারে/বাঁকিতে ।
৯. ১০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় যার মধ্যে ৮০% নগদে অবশিষ্ট বাঁকিতে ।
১০. রাফসানের নিকট ১০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় যার মধ্যে ৩০০ টাকা নগদে অবশিষ্ট চেকে ।
১১. চেকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় ১০০০ টাকা ।
১২. সোনালী ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় ১০০০ টাকা ।
১৩. বিলের বিনিময়ে পণ্য বিক্রয় ১০০০ টাকা ।
১৪. বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত আসবাবপত্র বিক্রয় ১০০০ টাকা ।
১৫. আসবাবপত্র বিক্রয় ১০০০ টাকা ।
১৬. পণ্য বিক্রয় ১০০০ টাকা ও এই বিক্রয় বাবদ ১০০ টাকা পরিবহণ খরচ প্রদান করা হল ।
১৭. রাফসানের নিকট পুরাতন আসবাবপত্র বিক্রয় ১০০০ টাকা ।
১৮. রাফসানের নিকট বাঁকিতে আসবাবপত্র বিক্রয় ১০০০ টাকা ।
১৯. ১০০০ টাকার শেয়ার / ডিবেঞ্চার / সঞ্চয়পত্র / প্রাইজ বন্ড / ঋণপত্র / বন্ড / সার্টিফিকেট বিক্রয় / ভাঙ্গানো হলো ।
২০. দাগ কাটা চেকের বিনিময়ে পণ্য বিক্রয় ১০০০০ টাকা ।
খরচ সংক্রান্ত লেনদেন
১. কাগজ / কলম / কালি / কার্বন / মনিহারি ক্রয় ১০০০ টাকা ।
২. মজুরি প্রদান ১০০০ টাকা ।
৩. বেতন প্রদান ১০০০ টাকা ।
৪. ভাড়া প্রদান ১০০০ টাকা ।
৫. i) বিজ্ঞাপন বাবদ প্রদান ১০০০ টাকা ।
ii) বিজ্ঞাপন বাবদ চেক প্রদান ১০০০ টাকা ।
iii) বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে বিনামূল্যে পণ্য বিতরণ ৫০০০ টাকা ।
৬. বেতন প্রদান ১০০০ টাকা ।
৭. ঋণের সুদ প্রদান ৫০০ টাকা ।
৬. বেতন প্রদান ১০০০ টাকা ।
৮. কমিশন প্রদান ৩০০ টাকা ।
৯. মেরামত খরচ প্রদান ১০০০ টাকা ।
১০. অবচয় ধার্য করা হলো ১০০০ টাকা ।
১১. ব্যাংক কমিশন চার্জ করলো ৩০০ টাকা ।
১২. আন্তঃপরিবহন খরচ ১০০০ টাকা ।
১৩. বহিঃপরিবহন খরচ ২০০০ টাকা ।
১৪. চা, বিস্কুট বাবদ ব্যয় ২০০ টাকা ।
১৫. আপ্যায়ন খরচ ৩০০ টাকা ।
১৬. অনাদায়ী পাওনা ধার্য করা হল ২০০ টাকা ।
১৭. উপযোগ খরচ ৩০০ টাকা ।
১৮. বাট্টা মঞ্জুর করা হল ২০০ টাকা ।
১৯. জানুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন প্রদান সমভাবে ১০০০০ টাকা ( হিসাব মাস যদি ফেব্রুয়ারি হয়)
২০। ভ্যাট প্রদান ২০০ টাকা ।
আয় সংক্রান্ত লেনদেন
১. ভাড়া পাওয়া গেল ১০০০ টাকা ।
২. বিনিয়গের সুদ পাওয়া গেল ৩০০ টাকা ।
৩. কমিশন পাওয়া গেল ৭০০ টাকা ।
৪. ব্যাংক সুদ মঞ্জুর করল ৭০০ টাকা ।
৫. শিক্ষানবিস সেলামি বাবদ ৫০০ টাকা পাওয়া গেল ।
উত্তোলন সংক্রান্ত লেনদেন
১. উত্তোলন ১০০০ টাকা ।
২. নগদ উত্তোলন ২০০০ টাকা ।
৩. আয়কর প্রদান ১০০০ টাকা ।
৪. জীবন বীমার প্রিমিয়াম প্রদান ৫০০ টাকা ।
৫. মালিকের ছেলের স্কুলের বেতন প্রদান ১০০০ টাকা ।
৬. মেয়ের জন্য ব্যবসা হতে কাগজ, কলম, কালি ও কার্বন ক্রয় ৫০০ টাকা ।
৭. ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মালিক ব্যবসায় হতে নগদ উত্তোলন ৩০০০ টাকা ।
৮. ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মালিক ব্যাংক হতে উত্তোলন করেন ২০০০ টাকা ।
৯. ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মালিক ব্যবসায় হতে পণ্য উত্তোলন করেন ১০০০ টাকা ।
১০. ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মালিক ব্যবসায় হতে বিক্রয় মূল্যে পণ্য উত্তোলন করেন ৫০০ টাকা ।
বিবিধ
১. জনাব রাফসান ২০১৮ সালের জানুয়ারি ০১ তারিখে নগদ ১০০০০০ টাকা, আসবাবপত্র ৩০০০০ টাকা, যন্ত্রপাতি ৫০০০০ টাকা, ব্যাংক জমা ৪০০০০ টাকা, ২০০০০ টাকা ঋণ এবং ১০০০০ টাকার পাওনাদার নিয়ে “রাফসান এন্টারপ্রাইজ” নামে ব্যবসা শুরু করেন ।
১. ৩মাস মেয়াদি ১০% সুদে প্রদেয় নোটের মাধ্যমে ঋণ / ধার গ্রহন ৩০০০০ টাকা ।
২. শেয়ার ক্রয় ৫০০০০ টাকা ।
৩. পণ্য বিক্রয়ের জন্য ক্রেতার নিকট থেকে নগদ গ্রহন ৫০০০ টাকা।
৪. রাফসানের নিকট থেকে পণ্য ক্রয়ের ফরমায়েশ / অর্ডার গ্রহন এবং ফরমায়েশ / অর্ডার বাবদ অগ্রিম গ্রহন ৭০০০ টাকা ।
৫. মালিকের ব্যক্তিগত দুটি আসবাবপত্র ৫০০০ টাকায় বিক্রি করে ৩০০০ টাকা ব্যবসায়ে প্রদান করল ।
৬. কারবারে আর্থিক অসঙ্গতির কারনে মালিক ব্যক্তিগত তহবিল হতে কর্মচারীদের বেতন প্রদান ১০০০০ টাকা ।
৭. ব্যবসায়ের আসবাবপত্র বিক্রয় ১০০০০ টাকা যার ক্রয় মূল্য ছিল ১২০০০ টাকা ।
৯. জানুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন প্রদান সমভাবে ১০০০০ টাকা ( হিসাব মাস যদি ফেব্রুয়ারি হয়)
১০. মালিক তার প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ৭৫০০০ টাকা ঋণ নেন এবং উক্ত ঋণের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকায় তা ব্যবসায় বিনিয়গ করেন ।
১১. ১০% হারে ঋণপত্র ক্রয় ১০০০০ টাকা ।
১২. মালিক কর্তৃক ব্যবসায়ে অতিরিক্ত মূলধন আনয়ন ৫০০০০ টাকা ।
১৩. মাসিক ৫০০০ টাকা বেতনে একজন বিক্রয় কর্মী নিয়োগ ।
১৪. রাফসানকে ১০০০০ টাকার পূর্ণনিষ্পত্তিতে ৯০০০ টাকা প্রদান করা হলো ।
১৫. ২% কারবারি বাট্টায় পণ্য বিক্রয় ১০০০০০ টাকা । ( নগদে ৬০%, ধারে ৪০%)
নমুনা ছক
১. জনাব রাফসান ২০১৮ সালের জানুয়ারি ০১ তারিখে নগদ ১০০০০০ টাকা, আসবাবপত্র ৩০০০০ টাকা নিয়ে “রাফসান এন্টারপ্রাইজ” নামে ব্যবসা শুরু করেন ।
জাবেদাঃ
“রাফসান এন্টারপ্রাইজ”- এর
সাধারন জাবেদা বই
তারিখহিসাব শিরোনাম ও ব্যাখ্যাখঃপৃঃডেবিটক্রেডিট২০১৮
জানুঃ – ১
নগদান হিসাব ডেঃ
আসবাবপত্র হিসাব ডেঃ
মূলধন হিসাব ক্রেঃ
( যেহেতু মালিক নগদ টাকা ও আসবাবপত্র নিয়েব্যবসায় শুরু করলেন।)
১০০০০০
৩০০০০
১৩০০০০
তারিখ বিবরণী ছক (হিসাব সমীকরনে লেনদেনের সারনী):
রাফসান এন্টারপ্রাইজ
বিবরণী ছক (হিসাব সমীকরনে লেনদেনের সারণী)
তারিখসম্পদসমুহ=দায় ও মালিকানা স্বত্বমন্তব্যনগদদেনাদারমনিহারী বা সাপ্লাইজআসবাবপত্রপ্রদেয়
বিল
পাওনাদারমুলধন
প্রারম্ভিক মূলধন
২০১৮
জানুঃ – ১
১০০০০০––৩০০০০––১৩০০০০মোট***********************