২০১১ সালে বাবা মায়ের দেখা পাত্রের সাথে বিয়ে হয় পুলমা সরকারের। কিন্তু তার সংসারটা টেকেনি। কারণ তার কন্যাসন্তান হওয়ার কারণে চক্ষুশূল হয়েছিলেন তার শ্বশুরবাড়ির পরিবারের এবং শ্বশুরবাড়ির মানুষদের এই নিম্ন মানসিকতা মেয়েটা মানতে পারেনি। বাড়ির লোকের পছন্দে বিয়ের পর 2013 এ যখন মেয়ে হল, তখন পরিস্কার বুঝিয়ে দেওয়া হল যে মেয়ে সন্তান তাদের কাছে অপাংক্তেয়। তাই মাত্র ৬ মাসের কন্যাসন্তানকে নিয়ে ঘর ছাড়তে হয়েছে তাকে, এমনকি তার নিজের পরিবারেও ঠাঁই হয়নি মেয়েটার। কারন, সমাজ ও লোকে কি বলবে সেই ভয়ে। পরিষ্কার ভাষায় তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে চলে আসলে বাপের বাড়িতে তার কোন স্থান নেই। বেপরোয়া হয়ে সেদিন বিরাট একটা ঝুঁকি নিয়ে decision টা নিয়েই ফেলেন তিনি। শুরু হয় “Single Parent hood” এর বিরাট এক লড়াই। একা হাতে নিজের মেয়েকে মানুষ করেছেন তিনি, এমনকি ডিভোর্সের জন্য এক টাকা খোরপোষ নেননি।
কিন্তু বিধাতা তার ভাগ্যেও সুখ লিখে রেখেছিলেন খানিকটা অন্যভাবে,,,। ২০১৯ সালে সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে একজন মানুষের সাথে পরিচয় হয় পুলমার, পরিচয় বদলায় সখ্যতায়। তার সাথে আলাপ, পরিচয়, সখ্যতা পর্ব মেটার পর এবং তার সাথে পুলমার কন্যার আলাপের পরে তাদের মধ্যে কি যে হল সে একমাত্র ঈশ্বর ই জানেন। পুলমা side হয়ে গেলেন, আর তারা দুজন জুটি বাধলেন। বুঝতে পারলেন যে, God had a bigger plan than mine. পুলমার মেয়েকে প্রথমদিন থেকে বড্ড আপন করে নেন ঐ ভদ্রলোক, ধীরে ধীরে মুগ্ধতা বদলায় প্রেমে।
ভদ্র মহাশয়ের নাম – রাজেন ঘোষ। কিন্তু মানুষটি ছিলেন অবিবাহিত এবং বাড়ির বড়ো ছেলে, তাই অনেকটা বেশি সমাজের ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে তাকে। কারণ আমাদের সমাজ আজও সাধারণ বিষয়গুলো বড্ড বাঁকা চোখে দেখে, সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না।
শেষমেষ যাবতীয় সীমানার গন্ডী পেরিয়ে অনেক বুঝিয়ে অনেক প্রতিকূলতায় নিজের পরিবারকে রাজী করিয়ে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ওনারা গাঁটছড়া বাঁধেন, ওদের ৩ জনের ৬ হাত এক হয়ে যায়,,,। পুলমার মেয়েকে মানুষটা পিতৃস্নেহ দিয়ে আপন করে নিয়েছেন, আজ বিয়ের এক বছর পরেও ওরা সুখে আছেন ৩ জনে।
এই গতমাসে তাদের বিয়ের এক বছর পার হলো। বিয়েতে পুলমার মা-বাবা থাকতে রাজি হয় নি, প্রথম দিকে কোনো কথাও বলতো না, তবে এখন জামাইয়ের সাথে বেশ ভালোই ভাব জমিয়েছে।
আর এদিকে তার মেয়েও আর তার মায়ের দলে নেই, কি সুন্দর দল বদল করে বাপ-মেয়ে Lobby বানিয়েছে। আজকের দিনে মায়ের চাইতেও মেয়ের বেশি ভাব বাবার সাথে।
আসলে জীবনে সুখ এভাবেই আসে, আচমকা আসে কিন্তু প্রবলভাবে আসে। মায়া এমন একটা জিনিস যেটায় মানুষ কখন নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে সে নিজেও বুঝতে পারে না। ভালো থাকুক ওরা তিনজন, সুখের হোক ওদের সংসার। পুলমার স্বামীর মতো মানুষদের বড্ড অভাব সমাজে, মেয়েটা সত্যিই ভাগ্যবতী এমন একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসাবে পেয়ে। 💕